সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক তরুণীকে (১৮) অপহরণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তিনজন গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই ২০২৫) রাতে অভিযান চালিয়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ অভিযুক্তদের আটক করে। পরে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন—সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা সদর ইউনিয়নের উমাগড় গ্রামের বাসিন্দা ও মাইক্রোবাস চালক শুভঙ্কর দাস (২৭), বীরদল কচুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও লেগুনা (ক্যারিকাভ) চালক বাবুল আহমদ (২৮), এবং চটিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ও পিকআপ চালক ফাহাদ মিয়া (২৫)। পুলিশের ভাষ্যমতে, এই তিনজন মঙ্গলবার রাতে একা ঘোরাফেরা করছিলেন এমন এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে কানাইঘাটের দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের এক গ্রামের নিজ ঘরে মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিলেন ওই তরুণী। রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে মেয়ে পাশে না পেয়ে এবং ঘরের দরজা খোলা দেখে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেন, কিন্তু মেয়েকে পাওয়া যায়নি।
পরদিন বুধবার সকালে বালুচর ও বীরদল খালোমোরা এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে তরুণীকে বিধ্বস্ত ও জামাকাপড় ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যান। পরবর্তীতে তরুণীর কথাবার্তায় ও অবস্থায় সন্দেহ হলে তাঁকে থানায় নিয়ে যান অভিভাবকরা।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আউয়াল জানান, ভুক্তভোগী তরুণী তার পরিবারকে জানায়—তাকে তিনজন ব্যক্তি জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান এবং পরে ধর্ষণ করেন। তরুণীকে পরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয় চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। ওসিসিতে তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় মেডিকেল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।
মামলা ও তদন্ত
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদের নিজ নিজ বাড়ি ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
ওসি আব্দুল আউয়াল আরও জানান, মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত মামলায় আদালতের মাধ্যমে শুক্রবার দুপুরে তিনজনকেই জেলহাজতে পাঠানো হয়। ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ ও প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
পারিবারিক প্রেক্ষাপট
ভুক্তভোগী তরুণীর মা জানান, তাঁর মেয়েটি জন্মগতভাবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং মাঝেমধ্যে কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, তবে তাঁকে আশপাশ থেকেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। তবে এইবারের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ভীতিকর। মেয়েটিকে বিধ্বস্ত ও আতঙ্কিত অবস্থায় খুঁজে পাওয়ার পরই তাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁর সঙ্গে অমানবিক কিছু ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, অভিযুক্তরা রাস্তার পাশে একা ঘোরাফেরা করছিলেন এমন অবস্থায় তরুণীকে লক্ষ্য করেন। পরে তাঁকে জোরপূর্বক একটি নোহা মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে এবং দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেন।
তারিখ: ০৪ জুলাই, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: kalerkantho, bdnews24, prothomalo
Click here to read this article in English