মাগুরায় আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং সে এখনও অচেতন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা তার অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
শনিবার (৮ মার্চ) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) এর সামনে দাঁড়িয়ে শিশুটির ফুপাতো ভাই জানান, শিশুটির অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “শনিবার সকালে চিকিৎসকরা সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ করে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। শিশুটির পার্লস রেট কমছে। গতকাল ৪% দেখালেও আজ সকালে তা ৩%-এ নেমে এসেছে। তার জ্ঞান এখনও ফেরেনি। চিকিৎসকরা বলেছেন, ২৪ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে অবস্থা অবনতির দিকেই যাচ্ছে।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুটির শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার জিসিএস মাত্রা ৪-এ নেমে এসেছে। হত্যার চেষ্টা করার সময় গলায় যে আঘাত করা হয়েছিল, তার কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে। শরীরে জ্বর আছে এবং নিউমোনিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবাই তার জন্য দোয়া করুন।”
শিশুটির মা হাসপাতালের বিছানার পাশে বসে কাঁদছেন। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। এক হাত দিয়ে মেয়ের মাথা স্পর্শ করছেন, আরেক হাতে নিজের চোখের পানি মুছছেন। শিশুটির মা জানান, তার মেয়ের এখনও জ্ঞান ফেরেনি। ঘটনার সময় বাড়িতে মেয়ে একাই ছিল। এ কারণে কে তাকে ধর্ষণ করেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারছেন না তারা।
ঘটনার পটভূমি
গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। শিশুটি কয়েক দিন আগে তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন।
মাগুরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুবাস রঞ্জন হালদার বলেন, “মেয়েটিকে প্রথমে শ্বাসকষ্টের রোগী হিসেবে হাসপাতালে আনা হয়। পরে মেডিসিন বিভাগে নিয়ে গেলে ধর্ষণ ও হত্যার অপচেষ্টার আলামত পাওয়া যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আট বছরের শিশুটির গলায় একটা দাগ আছে। মনে হচ্ছে, কিছু দিয়ে সেখানে চেপে ধরা হয়েছিল। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় আঁচড়ের দাগ রয়েছে। তার যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
পুলিশের তদন্ত ও আটক
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, “শিশুটির সঙ্গে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শিশুটি অচেতন অবস্থায় আছে। যে বাসায় সে বেড়াতে এসেছিল, ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেই কোনো ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শিশুটির দুলাভাই ও বোনের শ্বশুড়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।”
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন, “ভুক্তভোগী আট বছরের শিশুর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় থাকায় মামলা রেকর্ড কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তার বোন ঢাকা থেকে এসেছেন। মা–বাবা ঢাকায় শিশুর কাছে অবস্থান করছেন। তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন সন্দেহে ভুক্তভোগী শিশুর বোনের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাশুর পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর
শনিবার (৮ মার্চ) বিকেলে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক আশরাফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশক্রমে ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদের নির্দেশনা অনুয়ায়ী দ্রুততম সময়ে শিশুটিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে মেডিকেল টিম রয়েছে।”
তারিখ: ৮ মার্চ, ২০২৪
তথ্যসূত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন, প্রথম আলো, প্রথম আলো, ঢাকা ট্রিবিউন