মাগুরায় এক আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন শিশুটির মা। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, শিশুটির শ্বশুর বোনের স্বামীর সহায়তায় শিশুটিকে ধর্ষণ করেছেন। এ ঘটনায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চার আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (৮ মার্চ) সকালে শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান। বেলা তিনটার দিকে মামলাটি রুজু হয়। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪) এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, “শিশুটি বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। তার মা ঢাকায় রয়েছেন। সকালে শিশুটির বড় বোন ও বাবার মাধ্যমে মা থানায় এজাহার পাঠান। মামলার চার আসামি আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”
ঘটনার বিবরণ
মামলার এজাহার ও পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী, শিশুটির বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। কয়েক দিন আগে শিশুটি তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে পৌঁছান। শিশুটির অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে একই দিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় তাকে চেপে ধরা হয়েছিল। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁচড়ের চিহ্ন এবং যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে। পাশবিক নির্যাতনের কারণে তার যৌনাঙ্গে গুরুতর ক্ষত রয়েছে। গলার আঘাতও মারাত্মক।”
মামলার এজাহারে অভিযোগ
মামলার এজাহারে শিশুটির মা অভিযোগ করেন, তার মেয়ের স্বামীর সহায়তায় শ্বশুর শিশুটিকে ধর্ষণ করেছেন। এ ঘটনা শিশুটির শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন এবং তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষয়টি জানতেন এবং এ নিয়ে আগেও ঝগড়া হয়েছে।
গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে শিশুটি বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায়। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, শিশুটি মেঝেতে পড়ে আছে। শিশুটি বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। সকালে শিশুটি আবার বোনকে জানায়, রাতে বোনের স্বামী দরজা খুলে দিলে শ্বশুর তার মুখ চেপে ধরে কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। শিশুটি চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।
ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন মাকে ফোন করে বিষয়টি জানাতে চাইলে তার স্বামী ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় এবং দুই বোনকে আলাদা কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকালে এক প্রতিবেশী বাড়িতে এলে ভাশুর দরজা খুলে দেন। শিশুটির মাথায় পানি দেওয়া হয় এবং তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে শাশুড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তদন্ত ও গ্রেপ্তার
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত চার আসামি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। তারা অসংলগ্ন ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
শিশুটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, “২০ দিন আগে আমার সঙ্গেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। আমি টয়লেট থেকে ফিরে দেখি, ঘরে আলো বন্ধ। কেউ পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি বুঝতে পারি, সে আমার শ্বশুর। বিষয়টি স্বামীকে জানালে সে আমাকে দোষারোপ করে। আমি বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানাই, কিন্তু আমাকে আবার শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়। আমার ভেতর সব সময় ভয় কাজ করত। এ কারণে আমার সঙ্গে ছোট বোনকে পাঠানো হয়।”
তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, এর আগেও শ্বশুর দুই মেয়ের সঙ্গে অনুরূপ ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়েছে। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।
তারিখ: ৮ মার্চ, ২০২৫
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো