মাগুরার আট বছরের শিশু আছিয়া, যাকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটায় মারা গিয়েছে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে, মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি আজ বাংলাদেশ সময় বেলা একটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।” তবে আছিয়ার মৃত্যুর সময়কাল নিয়ে ধোয়াশা রয়ে গেছে বলে দাবী করেছেন অনেকেই। সরকারিভাবে ও হাসপাতাল সূত্রে আছিয়ার মৃত্যুর যে সময় জানা যাচ্ছে তার অনেক আগেই শিশু আছিয়ার মৃত্যু হয়েছে কিনা- তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
তিন দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বক্তব্যে জনৈক ডাক্তার নাজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আছিয়া মারা গেছেন আপনি কি জানেন এটা? আছিয়া গতকালকেই মারা গেছেন। গতকাল রাতেই মারা গেছেন আছিয়া। সরকারিভাবে কেন আসেনি সেটা আমি বলতে পারবোনা, কিন্তু আমরা যেই নিউজ জানি …….আচ্ছা আচ্ছা আমি আসলে এক্সাক্ট জিনিসটা জানিনা, আমরা যেই নিউজটা জানি যে আছিয়া বেঁচে নেই। আমার তো প্রোপার ইনফর্মেশন নিয়েই যেতে হবে। তাহলে হয়তো আমার জানার ভুল হতে পারে, আমরা যেই নিউজটা জানি যে, সে মারা গিয়েছে।” আট বছরের শিশু আছিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে বলেন তিনি।
বক্তব্যের শেষে বক্তব্যদানকারী ডাক্তার নাজিয়া নিজেকে ‘ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস সোসাইটি’ নামক একটি সংগঠনের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দাবী করেন। আছিয়া মারা যাওয়ার খবর পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আসার পরপরই ডাক্তার নাজিয়ার এই বক্তব্য ভাইরাল হয়। এই বক্তব্যের বরাত দিয়ে অনেকেই দাবী করতে থাকেন-শিশু আছিয়ার মৃত্যু কয়েকদিন আগে ঘটলেও, কোন এক কারণে এই খবর প্রচার মাধ্যমে আসেনি।
আট বছরের শিশু আছিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাকিবুল ইসলাম নামের একজন লেখেন, “আল্লাহ শিশুটিকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। এরপর তিনি ৪ দিন আগের তারই একটি পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “আছিয়ার বিষয়ে যদি মতামত দিতে বলেন, আছিয়া মারা গেছে। সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত/ স্বাভাবিক না হওয়ার পর্যন্ত সংবাদটা লুকিয়ে রেখে, তার চিকিৎসা চলছে, বলে চালিয়ে যেতে। ২-১ দিনের মধ্যে অন্য ইস্যু এনে, এই পরিস্থিতি শান্ত করে, মৃত্যুর খবর টা দেওয়া হবে। এখন মৃত্যুর খবর দিলে সরকার বেকায়দায় পড়বে। ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন আরো জোরদার হবে, মিডিয়াগুলোও নিউজ করবে। নোট : তবে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমার অবজারবেশন যেনো মিথ্যা হয়, আসিয়া যেনো বেচে থাকে, সুস্থ হয়ে মায়ের কোলে ফিরে আসে)।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আট বছরের শিশু আছিয়া মাগুরায় তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে তাকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এই ঘটনায় শিশুটির মা মামলা দায়ের করেন। মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশু আছিয়াকে মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে পৌঁছান। সেদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর গত শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশু আছিয়াকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (পিআইসিইউ) থেকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আট বছরের শিশু আছিয়াকে পিআইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
আট বছরের শিশু আছিয়ার চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তথ্যসূত্র: prothomalo, samakal, ekattor,
তারিখ: ১৩ মার্চ, ২০২৫