নির্বাসিত বাংলাদেশী লেখক, ব্লগার ও মানবাধিকার কর্মী আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। নভেম্বরের ৩ তারিখ পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কল্যাণী থানায় ডেকে নিয়ে ফরেনার্স অ্যাক্টের সেকশন ২৩এ এর অধীনে বাংলাদেশি ধর্মত্যাগী লেখক মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৩ নভেম্বর সকাল প্রায় ১০টার দিকে তাঁকে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে আটক করে আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। তাঁর পরবর্তী কোর্ট ডেট ১৭ নভেম্বর নির্ধারিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, এর আগে ২৭ অক্টোবর কল্যাণী থানার অধীন গয়েশপুর ফাঁড়িতে তাঁকে টানা চার দিন ধরে আটক রাখা হয়। তল্লাশির পর তাঁকে FRRO-তে নিয়ে গিয়ে ভিসা রিনিউয়ের আবেদন করিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে ২ নভেম্বর আবার থানায় হাজির হতে নোটিশ পাঠানো হয়। ৩ নভেম্বর থানায় গেলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
ফরেনার্স অ্যাক্ট সেকশন ২৩এ অনুযায়ী মামলা প্রমাণিত হলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা, এবং সাজার মেয়াদ শেষে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করা হতে পারে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে প্রাণনাশের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ২০১৭ সালে প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগ করেন। তিনি ইসলামের উগ্রপন্থা ও মৌলবাদ নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতেন। তিনি মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতন ও দমনমূলক ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য রাখতেন। সম্প্রতি তিনি ভারতে থেকেই তাঁর প্রথম বই “নাস্তিক ইমামের হজ্জ্ব” প্রকাশ করেন। তিনি মুফতি মাসুদ হিসেবে অধিক পরিচিত।
ধর্মত্যাগের আগে তিনি ঢাকার একটি মাদ্রাসার ইমাম, পাশাপাশি একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধারে হাফেজ, মাওলানা ও মুফতি উপাধিধারী আলেম। ইসলামের সমালোচনা করার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর হত্যার হুমকির মুখে তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
তিনি বৈধ ভিসায় ভারত প্রবেশ করেছিলেন বলে জানা যায় এবং পরবর্তী সময়ে একাধিকবার ভিসা নবায়নও পেয়েছেন। তবে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার সময় তাঁর ভিসা আবেদন FRRO কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর থেকে তিনি পুনরায় ভিসা অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
কারাবন্দী অবস্থায় তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। ভারতের বিভিন্ন জেলখানায় উগ্রপন্থী বন্দীদের উপস্থিতির কারণে তাঁর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন অনেক অধিকারকর্মী।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ব্লগার, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনেককে #FreeMuftiMasud হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে মুক্তি ও মানবিক বিবেচনার দাবি জানাতে দেখা যাচ্ছে।
তারিখঃ ৭ নভেম্বর, ২০২৫
Click here to read this article in English




