সরকারের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণভিত্তিক ভিডিও প্রকাশের জেরে ইউটিউবার এস এ সাব্বির কাশিমপুর কারাগারে বন্দি। সরকারি ঘনিষ্ঠ মহলের দায়ের করা মামলায় তাঁকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সাব্বির সরকার ‘এস এ সাব্বির’ নামে পরিচিত ইউটিউব, ফেসবুক এবং টিকটকে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণসহ ভিডিও প্রকাশ করে আসছিলেন, যেগুলোতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড ও তাদের বিদেশি শক্তির সঙ্গে কথিত অস্বচ্ছ যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।
তাঁর ভিডিওগুলোতে তুলে ধরা হয়, কিভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক মহলে বিদেশি এজেন্ডার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে। এসব ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই এস এ সাব্বিরের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন মহলে ব্যাপক অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।
২৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে ঢাকার বনানী থানায় প্রযোজক মুনতাসির মামুন একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তার অভিযোগ, সাব্বির সরকার তাঁকে ও আরও দুইজনকে বিদেশি এজেন্ট বলে প্রচার করেছেন। জিডিতে দাবি করা হয়, সাব্বির সরকারের ভিডিওগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা।
ভিডিওগুলিতে অভিযোগ করা হয়, মুনতাসির মামুন, নাট্য পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ এবং বিএনপি নেতা মাহদী আমিন ভারতের এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করছেন। আরও দাবি করা হয়, ১৯৭৫ সালের মতো সেনানিবাসের ভেতরে সেনাপ্রধানকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং এই পরিকল্পনায় জঙ্গি অর্থায়ন রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ পরবর্তীতে ভিডিওগুলোর পর্যালোচনা করে এবং রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার চালানোর অভিযোগ আনে। এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় সাব্বিরের উপস্থাপিত প্রমাণগুলোর নিরপেক্ষ যাচাইয়ের কোনো প্রামাণ্য ভিত্তি প্রকাশ করা হয়নি।
৪ এপ্রিল রাতের দিকে রাজধানীর মুগদা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এস এ সাব্বিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ তাঁর কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি মেমোরি কার্ড এবং দুটি (মেয়াদোত্তীর্ণ) পাসপোর্ট জব্দ করে।
পরদিন, ৫ এপ্রিল বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমদাদুল হক বাদী হয়ে জননিরাপত্তা আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১৩-এর ৬(১)(ক)(ঈ)/১২ ধারায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের দিনই (৫ এপ্রিল) পুলিশ আদালতে সাব্বিরকে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি বর্তমানে আটক রয়েছেন।
দীর্ঘদিন এস এ সাব্বিরের ইউটিউব, ফেসবুক এবং টিকটকে অনুপস্থিতিতে, মে মাসের পর থেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাব্বির সরকারের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার খবর ভাইরাল হতে থাকে। অনেকেই তাঁকে গুম করা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলতে থাকেন।
সাব্বিরের বাবা হেলাল সরকার, যিনি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার উল্লাহ বাজারে একটি লেপ-তোষকের দোকান চালান, জানিয়েছেন— তাঁর ছেলেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মাসখানেক আগে কারাগারে গিয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং জামিনের চেষ্টা করছেন।
হেলাল সরকার আরও বলেন, ‘আমার ছেলে ঢাকা থেকে লেখাপড়া করেছে। সে ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে ঢাকায় থাকে। সাতক্ষীরায় বিয়ে করেছে। সাব্বিরের স্ত্রী ফোন করেই গ্রেপ্তারের কথা জানায়।
মো. সাব্বির সরকার ঢাকার ডেমরা এবং মুগদা এলাকায় বসবাস করতেন। তাঁর ইউটিউব চ্যানেল ও টিকটকে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করতেন। পরিবারের বক্তব্য অনুসারে, সাব্বির ভিডিও প্রকাশ করতেন মূলত তথ্যের ভিত্তিতে।
তারিখ: ১০ জুন, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: prothomalo, banglatribune, ajkerpatrika, kalerkantho, samakal
Click here to read this article in English