বাংলাদেশে ‘মালাউনের বাচ্চা’ সংখ্যালঘুদের দেয়া একটি গালি!

সংখ্যালঘুদের দেয়া একটি গালি

প্রবাদে আছে, যদি কোন গ্রামের অবস্থা বুঝতে চাও। তবে সেই গ্রামের শিশুদের অবস্থা দেখে নিও। তাহলেই বুঝা যাবে গ্রামের অবস্থা। কেমন আছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা? কেন ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা’ কথাটা বললাম? কারন সব দেশেই যে সংখ্যালঘুরা অনিরাপদ তা কিন্তু সঠিক নয়।

যেমন, সাদ্দাম হোসেন যখন ইরাকের ক্ষমতায়, তখন সুন্নী মুসলমান সংখ্যালঘু ছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় ছিলেন সুন্নী সাদ্দাম। সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া মুসলিমরা ক্ষমতায় ছিলো না। আবার ইসরায়েলে মুসলিমরা সংখ্যালঘু কিন্তু তারা নির্যাতিত নয়। নিপীড়িত নন। কারণ, ইসরায়েলে গণতন্ত্র রয়েছে। গণতন্ত্র চর্চা রয়েছে তাই সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় না। আবার উল্টো চিত্র দেখি ইসলামি পাকিস্তানে। যেখানে পাঞ্জাবিরা সংখ্যালঘু লঘু হয়েও তারা সারা পাকিস্তানের হর্তা কর্তা। ক্ষমতা, ব্যবসা, চাকরি সব তাদের দখলে। এমন কি বেলুচিস্তান, পাকিস্তানের এত বড় প্রদেশ ও আয়তনে অনেক বড়। জনসংখ্যা এত সম্পদে বেশি তবুও বেলুচরা সব কিছু থেকে বঞ্চিত। সংখ্যাগুরু এবং মুসলিম হয়েও! ৭৫ বছর ধরেই বেলুচদের উপর নিপীড়ন চলছে!

তাই প্রশ্ন করছি, কেমন আছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মের সংখ্যালঘুরা? এবং সনাতন ধর্মের সংখ্যালঘু নারী ও শিশুর। কেন নির্দিষ্ট করে বললাম? কারণ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও তাদের সমস্যার অভাব নেই। বাংলাদেশে সব চেয়ে বড় সংখ্যালঘু হচ্ছে বাংলাদেশে মুসলিম পরিবার থেকে উঠে আসা নাস্তিক এবং লেসবিয়ান নারীরা। এ দুই গোষ্ঠী সব চেয়ে বড় সংখ্যালঘু বাংলাদেশে। এই দুই গোষ্ঠী বিপদে পড়লে কাউকে পাশে পায় না। না কোন সংগঠন, এমন কি সমাজ, সংবিধান ও রাষ্ট্র তার পাশে থাকে না। খোদ পরিবারই তার পক্ষে থাকে না।

AP1GczOgWUPctkvYKaJPNG6ePwknSNzNCbwvVZGzrkOtWvF41Mi5UAlYvsOSSIM67n8D1OiooCPeVGU6HWj4S61TmOqpHI2WkAVqDU qbU9 en6c4O0T8Fe5dvTyhkakmAhie0QIjrLNbzbUTIlYuQ 6uBgU=w579 h633 s no gm?authuser=1

এছাড়া, বিভিন্ন আদিবাসী ও তাদের ভাষাগত সংখ্যালঘু রয়েছে৷ রয়েছে খৃস্টান,বৌদ্ধ, কাদিয়ানি সহ আরো অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। আজ আমি তাদের কথা বলছি না। বলছি, বাংলাদেশের সনাতন সম্প্রদায় ও তাদের নারী শিশুর কথা। আমার কাছে, এক ১৪ বছরের সংখ্যালঘু মেয়ে শিশু বলেছিলো, সে তার একজন স্কুল শিক্ষিকার কাছে প্রাইভেট পড়তো। একদিন সে প্রস্রাব করতে চাইলে, তার সেই শিক্ষিকা বলেছিলো হিন্দুদের তার বাসায় প্রস্রাব করতে দেবে না।
ভাবা যায়, যিনি এটা বলেছিলেন তিনি একজন শিক্ষিকা!

এর চেয়েও ভয়ংকর হলো। প্রত্যেক সংখ্যালঘু শিশু ছোট বেলা থেকে একটা গালি শুনে শুনে বড় হয়। এমন কি বড় হয়েও শুনতে হয়৷ সে গালিটা বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত! তা হলো হিন্দুদের মালায়ুনের বাচ্চা! এর মানে হলো অভিশপ্তের বাচ্চা! একটি দেশের সংখ্যালঘু, সে দেশের সংখ্যাগুরুদের মুখ থেকে ‘অভিশপ্তের বাচ্চা’ গালিটা শুনতে শুনতে জন্মায় এবং মরে!বাংলাদের লাখে একজন সৌভাগ্যবান পাওয়া যেতে পারে যে সংখ্যালঘু সনাতনি নারী বা পুরুষ বা শিশুটা মালায়ুনের বাচ্চা গালিটা শুনেনি। বাংলাদেশে সনাতনিদের এ গালিটা কে দেয়? কারা দেয়? মাদরাসার মৌলবাদী মৌলভি ও তার ছাত্র? না, কেবল তা নয়। এদেশের অজোপাড়া গাঁয়ের অশিক্ষিত মুসলিম কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, থেকে শুরু করে। শিক্ষিত মুসলিম, সরকারি কর্মকর্তা, আমলা এমন কি সংসদ সদস্যও সনাতনিদের মালায়ুনের বাচ্চা বলে গালি দেয় প্রকাশ্যে।

আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককেও, সনাতনিদের দেখে মালায়ুনের বাচ্চা গালি দিতে কেবল শুনিনি, দেখেছিও! সনাতন সম্প্রদায়ের ছাত্ররা, বন্ধুরা তারা তাদের সহপাঠি থেকে এ গালিটা কি অহরহ তা শুনেনা? মুসলিম সহপাঠি ও বন্ধুটা হাসি ঠাট্টার ছলেও তার সনাতনি বন্ধুটাকে ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়৷ তার সনতানি বন্ধুটা সংখ্যালঘু বলে বাধ্য হয়ে গালিটা হাসি মুখে মেনে নেয়! কিন্তু একটা সনাতনিকে কোন মুসলিম যখন ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়। তখন যে তার বুকটা ফেটে যায় – এটা মুসলিম সমাজ কি বুঝে না? বুঝে। তা জেনে বুঝেই গালিটা দেয়।

AP1GczOPlb9Nfc9WuVB2a7 RiIkQuyEyLLWl59evjrfwh3XbtpmzLyrJQNkLouqsIhnNJH80T pFAE U08tMti M33LqthG4O0UGSQcvI30stEBiQNM1iCgwjlCOEPrbM9HLo1anBQvEcKFnj8vFfTc28ii=w491 h633 s no gm?authuser=1

এ গালিটা মুসলিম সম্প্রদায় তার ধর্মীয় আদর্শ ও দর্শন থেকে পেয়েছে। এই গালিটা যে অপরাধ তা মুসলিম সম্প্রদায় ভুলে থাকতে চায়। অথবা সনাতনিদের মালায়ুনের বাচ্চা গালি দেয়াটা নিজেদের অধিকার মনে করে। একবার কোন সনাতনি যদি এই গালিটার পাল্টা উত্তর দেয়। তাহলে সনাতনি নয়, সেই সনাতনি সমাজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে সংখ্যাগুরু মুসলিমেরা। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে তো দেবেই; তাদের নারীদের ধর্ষণ করতেও কুন্ঠাবোধ করবে না।

অনেকেই ভাবতে পারেন, আমি কেন সনাতনিদের জমি দখল, মন্দির ভাঙ্গা, প্রতিমা ভাঙ্গার বিষয়ে কথা না বলে, কেন ঐ দুটি শব্দ ‘মালায়ুনের বাচ্চা’ গালিটা নিয়েই পরে আছি। তাই হয়তো ভাবছেন অনেকে।

তাহলে একটা উদাহারণ দেই। আমার পরিচিত বেশ কয়েকটি পরিবার ময়মনসিংহ থেকে ভারতের চলে গেছে। আমি তাদের প্রত্যেককে ব্যাক্তিগত ভাবে প্রশ্ন করেছিলাম। আপনারা ভারতে কেমন আছেন? প্রত্যেকে শুরুতে আমাকে কি বলেছে জানেন? কেউ বলেছে, দাদা, যে ভাবেই থাকি না কেন? কোন শুয়োরের বাচ্চা, এখানে আমাকে মালায়ুনের বাচ্চা বলে গালি দেয় না অন্তত! একথাটা যখন আমাকে বলেছিলো। তখন তাদের অনেকের চোখ জলে ভরে গিয়েছিলো।

বাংলাদেশে যে সকল মুসলিমরা সনাতনি নারী-পুরুষ তরুণ-তরুণীকে মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দেন, তারা কি জানেন, এ গালিটা সনাতনি বা হিন্দুদের বুকে তীরের মত গেঁথে যায়? ঠিক সেই ব্যাঙের মুখে পাথর দিয়ে ঢিল ছোড়ার মত। আপনার কাছে ব্যাঙের মুখে ঢিল দেয়া খেলা মনে হতে পারে! কিন্তু ব্যাঙের জন্য তা ভয়ংকর আঘাত। হিন্দুদের মালায়ুনের বাচ্চা বলে গালি দেয়াটাও সে রকম।

আপনি ভারতে এসে একজন হিন্দুকে মালায়ুনের বাচ্চা বলে গালি দেয়ার সাহস পাবেন? পাবেন না। সেই জন্য প্রশ্ন করেছি। কেমন আছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা?

গ্রাম্য আরেকটা প্রবাদ আছে, এক ভাতে টিপ দিলেই হাড়ির সব ভাতের খবর জানা যায়। একটা গালি সামনে এনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের করুণ পরিণতির অবস্থা তুলে ধরলাম। তাদের জমি দখল, দোকান দখল, মন্দির ভাঙা, প্রতিমা ভাঙ্গা – এসব তো পুরাতন গল্প। প্রতিমা ভাঙার খবর শুনেই বুঝতে পারি সামনে পূজা। যেমন অনেকটা পিয়াজ, ছোলা বুট, তেলের দাম বৃদ্ধি দেখে বুঝতে পারি রোজা আসছে!

৪৭ এ, এ অঞ্চলে হিন্দু গণহত্যা হয়েছে। ৭১ এ হয়েছে। এ তো আরো অনেক পুরাতন কথা। মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন হলো। স্বাধীন বাংলাদেশে কোন সরকারের আমলে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়নি? কোন সরকারের আমলে সনাতনি বা হিন্দুদের, মন্দির, বাড়িঘর লুট ও জ্বালিয়ে দেয়া হয়নি? এবং বর্তমান নোবেল লরিয়েট ইউনুস সরকারের আমলে তা আরো ভয়ংকর রুপে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বিশ বছর ধরে তথাকথিত ইসলাম ধর্ম অবমাননা, কোরানের অবমাননা, নবী মোহাম্মদের অবমাননা। এ সব মিথ্যা অভিযোগে কত জন সংখ্যালঘুকে পেটানো হয়েছে? জেলে ঢোকানো হয়েছে? এ হিসাব আপনাদের জানা আছে তো? বলার অপেক্ষা রাখে না। একই অভিযোগে ব্লগার, নাস্তিক মুক্তচিন্তকদের উপর হামলা, মামলা এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে।

AP1GczPRjtdRszJoaI4r9sSXIRRT 99B6 gLZ9eTt1yhkZqRaSFeSJWq65 fzKyrItCJuK6H9Am9LsbYrVQKMbMBZDCIhCznU151aF UKE97jmnJYX4f6YWENX4jPeyvIwFg7Yw1P9OGl mOWX vye89WhQ=w633 h633 s no gm?authuser=1

ধর্মের অবমাননা, কোরানের অবমাননা, নবীর অবমাননার ধুয়া তুলে তো হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরেও হামলা করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু হিন্দু শূন্য করার নয়া অপকৌশল। এ ছাড়া বাংলাদেশের মুসলিমরা তো সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কখন কোন হিন্দুকে এক টুকরো গরুর মাংস খাওয়াবে! সব চেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো, বাংলাদেশে হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত তো করাই হয়। তা তো সবার জানা। খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যালঘু হয়েও, হিন্দু সংখ্যালঘুদের ধর্মান্তরিত করে। আমি আমার জেলা জামালপুরের খৃষ্টান মিশনারী গুলোর কার্যক্রম লক্ষ্য করেছি। তারা যত মানুষকে ধর্মন্তরিত করে খৃষ্টান বানিয়েছে তার ৯৫% হিন্দু সম্প্রদায়ের!

বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমরা, সংখ্যালঘু হিন্দুদের কেবল মালায়ুনের বাচ্চা বলেই থামে না। কখন, গরুর মাংস খাওয়াবে সে তালে তো থাকেই। ছোট ছোট মুসলিম শিশু কিশেরেরা, হিন্দু শিশু কিশোরদের বলে, কালেমা বল! এগুলো তারা শিখে তাদের পরিবার ও মৌলোভিদের কাছ থেকে। আর যারা,বড়, তারা চিন্তা করে কখন একটা, হিন্দু তরুনীকে বিয়ে করে মুসলিম বানাবে। বাংলাদেশের অনেক মুসলিম মনে করে, তারা যত জঘন্য অপরাধই করুক। যদি কোন মুসলমান, একটি হিন্দুকে মুসলিম বানাতে পারে, তবে সে তার চৌদ্দ পুরুষ সহ বেহেস্তে চলে যাবে বিনা বাধায়!

সনাতনি বা হিন্দুের প্রতি কি রুপ ঘৃণা প্রকাশ করে মুসলিমরা। তার কয়েকটা উদাহারণ দেই। আমি চাকুরির কারনে কয়েকবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলাম।

একটি সরকারী অফিস। একজন হিন্দু ছেলে, মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে৷ সে খুশিতে মিষ্টি বিতরন করছিলো। সবাই খাচ্ছে। আমি খাচ্ছি না। কারণ, ঢাকার মিষ্টি আমার কাছে স্বাদ লাগে না৷ আমার পাশে বসা একজন কর্মচারীও খাচ্ছে না৷ ভাবলাম তার বোদ হয় ডায়াবেটিস রোগ আছে। কিন্তু পরে যা শুনলাম, আমার চোখ তাতে কপালে উঠে গেলো। তিনি বললেন, ভাই মিষ্টি না খেয়ে ভালো করেছেন। শালা এই মহিলার লজ্জা আছে? ছি! একটা হিন্দু পুরুষকে বিয়ে করলো। আমার মেয়ে হলে কবর দিয়ে ফেলতাম। আর ঐ শালা মালাউনের বাচ্চাকে জবাই করে দিতাম! আমি অবাক হয়ে গেলাম এ কথা শুনে! আমি বললাম, হিন্দু লোকটা তো মুসলমান হয়ে গেছে! তিনি উত্তরে যা বললেন, আরো বিস্ময়কর। বললেন, বাংলাদেশে কি মুসলমান পুরুষের অভাব? একটা হিন্দুর কাছে শুইতে গেলো কেন?

আমি একটি অঞ্চলে ইউনিয়ন নির্বাচন দেখতে গিয়ে ছিলাম৷ একজন মেম্বার প্রাথী হিন্দু সম্প্রদায়ের সরকারী দলের প্রার্থী। লক্ষ্য করলাম, মেম্বারের সামনে তার দলের লোক তাকে ভোট দিতে বললেও; পরে আমি দেখেছি লোকজনকে বলছে, কোন মালাউনেরে ভোট দেয়ার দরকার নেই! মসজিদেও ইমামকে দিয়েও বলানো হয়েছে, হিন্দু প্রার্থীকে যেন ভোট কেউ না দেয়!

একটা গ্রামে শিশুদের পোশাক ও চেহারা দেখে যেমন গ্রামের অবস্থা বুঝা যায়। তেমনি একটি আধুনিক রাষ্ট্রের অবস্থা বুঝা যায়, শাসক ও সমাজ নারী ও সংখ্যালঘুদের সাথে কেমন আচরণ করে।

আরো একটা ঘটনা উল্লেখ করি। আমার পরিচিত একজন উচ্চশিক্ষিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করা, তার হিন্দু ঘৃণার নমুনা শুনুন। আমি তখন ঢাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতাম। আমার উপরের তলাতে একটি হিন্দু পরিবার থাকে। আমার সেই পরিচিতজন তা দেখে বলে, আপনার বাড়ি ওয়ালা তো হাজী৷ হাজী সাহেবকে গালি দিয়ে বলে, শালার লজ্জাও করে না, হিন্দুর কাছে বাসা ভাড়া দিয়ে খায়! তার স্ত্রীও সেই কথাতে সায় দিলো বিশ্রী শব্দ ব্যবহার করে। যা ভাষায় প্রকাশ করা গেলো না। আগেই বলেছি, সে কিন্তু মৌলোভি বা মাদরাসার ছাত্র নয়! মজার বিষয় হলো, যে পরিচিতজন এ কথা বললেন, তিনি ও তার স্ত্রী দুজনেই আধুনিক (?) নিয়মিত স্বামী স্ত্রী দুজনেই মদ পান করে! তিনি মাঝে মাঝেই তার বাসায় ডেকে নিয়ে মদও খাওয়ান আমাকে।

AP1GczNLWzTnIi3qhZ6K3SJZ0VFV0ic DAPyYtmiA7fmv44t8LBVpjw2G30lcUf8gQS5rM DouRo phy4kfGrMe8kGi5jIDxM5OYTccADQiB6szDgzki euUkUoI0 toKHC45WquCxDT gVc7k 3OLph6FVS=w692 h388 s no gm?authuser=1

আমি আরো একটি অদ্ভুত কথা শোনাই। আমি অন্তত দশজন বাংলাদেশী মুসলমানের মুখে শুনেছি। ভারতে থাকলে নাকি তাদের কাছে দেশটা হিন্দু হিন্দু গন্ধ(?) করে! অথচ, ভারতে ২৫ কোটি মুসলমান বাস করে! এই যে মানসিক ব্যাধি। এ ব্যাধিকে আপনি কি দিয়ে সারাবেন? নিশ্চয়ই বলবেন, শিক্ষা দিয়ে! তাই না? আমি যাদের কথা বললাম, তারা সকলে উচ্চশিক্ষিত ছিলো! এদের একজন সিঙ্গাপুরে দশ বছর। আর দুজন ইউরোপে থেকেছেন এক যুগেরও বেশি। জানি না, তারা সে সব দেশে খৃষ্টান খৃস্টান গন্ধ পেয়েছে কি না! কেবল শিক্ষা নয়। পরিবেশও তাদের মগজ থেকে ছোট বেলায় গেথে থাকা সাম্প্রদায়িক চেতনা দূর করতে পারেনি!

আমি যখন কিশোর ছিলাম। আমার অনেক বন্ধু ছিলো হিন্দু। আমার স্কুল কলেজের অনেক বন্ধু হিন্দু। আমরা পুজো দেখতে যেতাম। দুর্গাপূজার মেলা মানেই আনন্দ। কেবল হিন্দুরা নয় আমরাও পুজোতে কত কিছু কিনতাম। আমি আমার ছোট বোনদের নিয়ে যেতাম। আমার তিন বোন ছিলো। একটাকে আমি কোলে নিতাম। আমার ছোট বোন আরেকটাকে কোলে নিতো। আমাদের বাসার কাছাকাছিই দুটি মন্দির। মন্ডপের প্রতিমা দেখাতে হতো কাঁধে তুলে। অথচ আমরা মুসলিম পরিবারের। মেলায় না নিয়ে গেলে,আমার বোনেরা কাঁদতো।

আমার বোনদের দুর্গাপুজার মেলায় না নিয়ে গেলে, মা বকতেন। অথচ, আমার মা গোড়া মুসলিম পরিবার থেকে উঠে আসা । এ রকম কেবল আমার পরিবার নয়। মেলায় হাজার হাজার মানুষ যেতো। তার ৭০% ই থাকতো মুসলিম। আমার বয়সী যারা আছেন তারা অনেকেই এ ঘটনার সাক্ষী। কোন মুসলিম তো যথারীতি আরতি দিতো। আজ বাংলাদেশে এসব কল্পনা করা কঠিন। আমার পরিচিতি অনেকের বন্ধু ও বান্ধবী সহপাঠী ছিলো হিন্দু। তাদের সন্তানেরা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তারা হিন্দু বন্ধু-বান্ধবী রাখা পাপ মনে করে! তারা হিন্দুর জমি দখল, হিন্দু নারী ধর্ষণ, হিন্দুদের উপর নির্যাতন করা পাপ মনে করে না। আর মন্দির মূর্তি ভাঙা তো যথারীতি ধর্মীয় ও পূণ্যের কাজ মনে করে!

৪০ বছর আগেও বাংলাদেশে নুন্যতম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিলো। ইদে হিন্দুরা মুসলিমের বাসায় আসতো। মুসলিমরাও হিন্দুদের বাসায় যেতো পুজোর সময়৷ এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা ছিলো। প্রায় সব বড় ব্যবসায়ী ক্যাশিয়ার, ম্যানেজার থাকতো হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ। এখন আপনি তা দেখবেন না। হিন্দুদের দানের স্কুলে, হিন্দু শিক্ষকের কাছে পড়েও। এ দেশের মুসলিম ছাত্ররা ছাত্রীরা হিন্দু বিদ্বেষী হয়ে উঠেছে। এটা পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে। শিক্ষা, পরিবেশ মানুষকে মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক করে গড়ে তোলে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায়,পুরোপুরি উল্টো। শিক্ষা ও পরিবেশ বাংলাদেশের মুসলিমদের মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক করতে পারেনি!

আজকের সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষগুলো। ৮০ ও ৯০ দশকের মুসলমানদের চেয়ে শত ভাগ বেশি সাম্প্রদায়িক। চরম সংখ্যালঘু হিন্দু বিদ্বেষী। আপনারা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন। আমেরিকা ইউরোপে কানডা, অস্ট্রেলিয়ায় বাস করা বাংলাদেশের মুসলিমরা। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের তাড়িয়ে দিতে চায়! তারা কেবল মুখে বলে না। প্রকাশ্যে, ফেসবুকে লিখে! ফেক আইডি থেকে নয়, অরিজিনাল আইডি থেকে লিখে। আর যারা লিখেন না। তারা পারিবারিক ও ঘরোয়া বৈঠকে তা বলেন!

এই হিন্দু ঘৃণা রাজনৈতিক, অর্থনেতিক। শিক্ষা চাকুরি ব্যবসার প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া থেকে উৎপত্তি। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র তো রয়েছেই। বিশেষ করে মসজিদের ইমাম ও মাদরাসার শিক্ষকেরা এই ঘৃণা ছড়ানোয় সবার অগ্রভাগে আছেন। ইসলাম ধর্মে গ্রন্থগুলো হিন্দু ঘৃণার রসদ জোগায় তাতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে হিন্দু ঘৃণার আরো একটি অন্যতম প্রধান কারণ আছে। তা হলো সংখ্যালঘু হিন্দুরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলো। যদিও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা অনেক মুসলিমও হিন্দুদের ঘৃণা করে থাকে।

এই হিন্দু বিদ্বেষ থেকেই ভারত বয়কট, ভারত ঘৃণার উৎপত্তি।

লেখকঃ শেখ ফরিদ

লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট

তারিখঃ ৩০ জুন, ২০২৫

Click here to read this article in English

আরো খবর পড়ুন

[মাইনোরিটিওয়াচে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]

শিশুর গলায় ছুরি ধরে মাকে
নারী

পঞ্চগড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর গলায় ছুরি ধরে মাকে গণধর্ষণ, আপোষের চাপ 

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় এক মর্মান্তিক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে । শুক্রবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে দুই বছর বয়সী একটি শিশুর গলায়

Read More »
উত্তেজনা: পদোন্নতির দিনে
বাংলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা: পদোন্নতির দিনে সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, বোর্ড স্থগিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক পদোন্নতিকে কেন্দ্র করে গত ৪ জুলাই ২০২৫ (শুক্রবার) একটি নজিরবিহীন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রশাসনিক ভবনে তালা

Read More »
স্বামীকে রাতভর আটকে Gang-Rape of Housewife and Overnight Tortur
নারী

ভোলায় গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও স্বামীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বামীকে আটকে রেখে মারধরের ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা

Read More »
নারীকে এসিডে দগ্ধ করে
নারী

অন্তঃসত্ত্বা নারীকে এসিডে দগ্ধ করে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ফেলে যায়

বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের পাশে জঙ্গল থেকে হাত-পা বাঁধা এবং পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ।

Read More »
ফজর আলী এখনো পলাতক
নারী

মুরাদনগরে হিন্দু নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা: অভিযুক্ত ফজর আলী এখনো পলাতক

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফজর

Read More »
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সংখ্যালঘুদের কান্না
মতামত

সংখ্যালঘুদের কান্না, রাষ্ট্রের নীরবতা: মানবাধিকারের ভয়াবহ পরাজয়

ইন্ডিয়ায় একটা বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী তোলপাড় হয়ে গেলো। আমরা মুসলিমরা সেই দুঃখে এখনও কাঁদি। বাংলাদেশে প্রতি

Read More »
Scroll to Top