রাজধানীর খিলক্ষেতে রেলের জমিতে অস্থায়ীভাবে নির্মিত দুর্গা মন্দিরকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। মৌলবাদীদল মন্দিরটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি জানায় এবং সোমবার (২৩ জুন) রাতে মিছিল করে তারা এই আল্টিমেটাম ঘোষণা করে। ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন মন্দির কমিটি অস্থায়ী এই মন্দিরের সীমানায় পাকা দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে। মৌলবাদীরা মন্দিরটি মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে সরানোর দাবি তোলে।
মন্দিরের সনাতন ধর্মাবলম্বী কমিটির সদস্য সুমন সুধা এই ঘটনার কথা সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, সোমবার গভীর রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের একটি দল মন্দিরে এসে জড়ো হয় এবং মঙ্গলবার বেলা ১২টার মধ্যে মন্দিরটি সরানোর আল্টিমেটাম দেয়। সুমন সুধা এই ঘটনার তীব্র উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, এটি তাদের ধর্মীয় অধিকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার শামিল।
খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি ঘটনার কথা জানেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। তিনি জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারা থানায় উপস্থিত হয়েছেন এবং পুলিশ তাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে। আশিকুর রহমান আরও বলেন, আগামীকাল স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথেও বসে সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করা হবে এবং কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় তা তারা তদারকি করছেন।
মন্দিরটি অস্থায়ীভাবে খিলক্ষেতের রেলের জমিতে অবস্থিত বলে খিলক্ষেত থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরটি অস্থায়ীভাবে বসানো ছিল এবং এটি চারপাশে শুধু টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল। সোমবার মন্দির কর্তৃপক্ষ পাকা দেয়ালের কাজ শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দেন এবং এর জের ধরে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
মঙ্গলবার সকালে খিলক্ষেতে সেনাবাহিনী, র্যাব এবং বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং স্থানীয় বাসিন্দা ও মন্দির কমিটির সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করে। খিলক্ষেত থানার ওসি কামাল হোসেন জানিয়েছেন, উভয় পক্ষই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আর কোনও ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন না। পাশাপাশি, মন্দিরটি রাখা বা না রাখার বিষয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী কমিটি এবং রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে আরেকটি বৈঠক হয়েছে। মন্দিরের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রেল কর্তৃপক্ষই নেবে বলে তিনি জানান।
বর্তমানে খিলক্ষেত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং তারা নিয়মিতভাবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। আগামী দিনগুলিতে মন্দিরটি রেলের জমিতে থাকা না থাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিভাবে নেওয়া হবে তা এখনও অমীমাংসিত রয়েছে।
তারিখ: ২৪ জুন, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: banglatribune
Click here to read this article in English