গাজীপুরের কাপাসিয়ার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জে ৫২ বছর ধরে চলে আসা নাটকের মঞ্ছায়ন বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় কিছু ধর্মপ্রাণ মুসল্লির আপত্তিতে এ বছরের নাটক “আপন দুলাল” মঞ্চস্থ না করেই বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সকালে রানীগঞ্জ উদয়ন সংঘ মাঠে নাটকটির প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল। মাসখানেক ধরে নাট্যকর্মীরা নাটকটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে এই মাঠে নিয়মিত নাটক, গীতিনাট্য আর পালাগানের আয়োজন করে আসছে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা। চলতি বছর ছিল তাদের ৫২তম আয়োজন।
নাটকের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় নাট্যকর্মী খন্দকার শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, বুধবার রাতে বাজারে বসে আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল, এমন সময় রানীগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম মো. আজিজুল হক ও মসজিদের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন মুসল্লি এসে নাটকটি বন্ধ করতে বলেন। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভবিষ্যতে এখানে আর কোনো নাট্য প্রদর্শনী হতে দেওয়া হবে না।
এর পরদিন সকাল ৯টার মধ্যে ডেকোরেটরের লোকজন মঞ্চ ও প্যান্ডেল খুলে নিয়ে যায়।
শাহাদাত হোসেন বলেন, “আপন দুলাল একটা গীতিনাট্য। কোনো নারী চরিত্র নেই, অভিনয়ও ছিল শুধুই পুরুষদের। এতটা পরিশীলিত একটি নাটক, তবুও আমরা মঞ্চে তুলতে পারলাম না। আমাদের এতদিনের পরিশ্রম, চেষ্টা—সবই শেষ হয়ে গেল একরকম নিষেধাজ্ঞায়।”
এদিকে রানীগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম মো. আজিজুল হক বলছেন, “নাটকটি সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে—এমন আশঙ্কায় স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নাট্য আয়োজকদের অনুরোধ করেছেন অনুষ্ঠানটি না করতে। আয়োজকরা শেষ পর্যন্ত সমাজের শান্তির কথা ভেবেই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন।”
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এ ধরনের আয়োজন সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমরা মনে করি। তাই শুধু রানীগঞ্জ নয়, পুরো দুর্গাপুর ইউনিয়নে আর কোনো নাটক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতে দেওয়া হবে না—এই সিদ্ধান্ত আমরা জানিয়ে দিয়েছি।”
কাপাসিয়া থানার ওসি মো. আব্দুল বারিক জানিয়েছেন, “নাটক বন্ধ হওয়া বা বাধা দেওয়া নিয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।”
এই ঘটনার পর কাপাসিয়ার সংস্কৃতিচর্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পাঁচ দশকের ঐতিহ্য কি তবে এখানেই থেমে যাবে?—এমন প্রশ্ন এখন স্থানীয় সংস্কৃতিপ্রেমীদের মুখে মুখে।
তারিখ: ৪ এপ্রিল, ২০২৫
তথ্যসূত্র: banglatribune, dhakatribune, prothomalo
Click here to read this article in English