গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় এক নারী পোশাক শ্রমিককে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়, ওই নারীকে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তার ওপর পালাক্রমে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। ধর্ষণের পর তাকে হুমকি দেওয়া হয় যেন তিনি ঘটনাটি কাউকে না জানান। পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং থানায় যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
৩৫ বছর বয়সী ওই নারী গাজীপুরের স্থানীয় সিআরসি নামক একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত। তাঁর স্বামী জানান, ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার (২০ মে) রাত ১১টার দিকে কাজ শেষে কারখানা থেকে তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের নতুন পটকা গ্রামের একটি দোকানের সামনে অটোরিকশা থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা তিন যুবক তার পথরোধ করে।
অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তরা ওই নারীকে জাপটে ধরে মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে নিকটস্থ গজারি বনের ভেতরে নিয়ে যায় এবং সেখানে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর বিষয়টি কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে তিনি নিজেই ফোন করে স্বামীকে জানালে তিনি গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন।
পরদিন সকালে ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযুক্তদের পরিবারের কাছে বিচার চাইলে, তাদের পক্ষ থেকে উল্টো হুমকি দেওয়া হয় এবং স্থানীয় সালিশ ডেকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। থানায় না যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় বলে জানানো হয়। দীর্ঘ চাপ ও হুমকি উপেক্ষা করে গত শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামী গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলায় নাম উল্লেখ করে তিন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন—নতুন পটকা গ্রামের সইদ আলীর ছেলে আল আমিন (২৭), সাইফুল ইসলামের ছেলে শান্ত (২৫) এবং মোন্তাজ উদ্দিনের ছেলে সুমন (২৬)। অভিযোগের পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বারিক জানান, ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুটি পুলিশ দল গঠন করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগের ঘটনায় যারা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওসি আরও বলেন, “ভুক্তভোগী নারীকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
তারিখ: ২৬ মে, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: banglatribune, ajkerpatrika, ittefaq, ntvbd, bdnews24, kalerkantho
Click here to read this article in English