April 27, 2025 3:11 pm

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে হিন্দু যুবককে গণপিটুনি

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে555

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা: ঘটনা ও বিশ্লেষণ

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে গুরুতর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কার্টুন ও কটূক্তি সম্বলিত একটি পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় মুসলিম জনতা এক হিন্দু যুবককে আটক করে গণপিটুনি দেয় এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনকে সেনাবাহিনী পর্যন্ত মোতায়েন করতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের দ্রুত হস্তক্ষেপে ওই যুবককে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং ঘটনাস্থলে আরও বড় সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হয়। এই প্রতিবেদনে উক্ত ঘটনার সময়রেখা, জড়িত ব্যক্তিবর্গের পরিচয়, স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া, প্রশাসনের ভূমিকা, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, স্থানীয় সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক, পূর্ববর্তী অনুরূপ ঘটনার প্রেক্ষাপট, আইনি দিক (বিশেষত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন), গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

ঘটনার সময়রেখা

  • ৬ এপ্রিল ২০২৫, সকাল থেকে পূর্বাহ্ন: টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া এলাকার বাসিন্দা অখিল চন্দ্র মন্ডল (বয়স ৪০) নামে এক হিন্দু যুবক নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অশোভন/অশালীন কার্টুন এবং আপত্তিকর মন্তব্য পোস্ট করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পোস্টটি কিছুক্ষণের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এলাকায় খবর ছড়িয়ে যায়।
  • দুপুর আনুমানিক ১২টা, ৬ এপ্রিল: স্থানীয় কিছু লোক অখিলের কর্মস্থল দেলদুয়ার দক্ষিণ বাজারের তার স্বর্ণের গহনার দোকানে ছুটে যান। তাঁরা অভিযোগকৃত পোস্টটি মুছে ফেলার জন্য অখিলকে চাপ দেন। পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং খবরটি আরো লোকজনের মধ্যে ছড়াতে থাকে।
  • ৬ এপ্রিল, দুপুর ১২টা-১২টা ৩০: অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় মুসলিম জনগণ সংঘবদ্ধ হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাতে রূপ নেয়। উত্তেজিত জনতা অখিলের দোকানে হামলা করে তাকে মারধর শুরু করে এবং দোকানের ভেতরে আটকে রাখে । পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অখিল পাশের একটি দোকানে পালিয়ে আশ্রয় নেন বলে জানা যায়। কিন্তু শতাধিক ক্রুদ্ধ মানুষ ওই দোকান ঘিরে “বিচার চাই” স্লোগান দিতে থাকে এবং তাঁর শাস্তির দাবিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এ সময় এলাকায় দ্রুত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
  • ৬ এপ্রিল, প্রায় বেলা ১২টা ৩০: ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত দেলদুয়ার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবুও জনতার ক্ষোভ থামছিল না। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন মনে করে স্থানীয় প্রশাসন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অবহিত করে সহযোগিতা চায়। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
  • ৬ এপ্রিল, দুপুর ১টার আগেই: সেনাবাহিনীর টিম পৌঁছানোর আগেই উত্তেজিত জনতা আটকে রাখা অখিলের ওপর হাত তুলতে শুরু করে এবং গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে অখিলকে জনতার হাত থেকে মুক্ত করেন। দ্রুত তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে ঘটনাস্থল থেকে বের করে আনা হয়। কিছুক্ষণ পর সেনা সদস্যরাও সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। অখিলকে সেনাবাহিনীর প্রহরায় দ্রুত সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
  • ৬ এপ্রিল, দুপুর ১টা-দুপুর ১টা ৩০: আহত অখিল চন্দ্র মন্ডলকে প্রথমে দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে তাঁর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে (টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল/মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে) স্থানান্তর করা হয়, যেখানে পুলিশি পাহারায় তার চিকিৎসা চলতে থাকে। এ সময়ে দেলদুয়ার এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
  • ৬ এপ্রিল, দুপুর ১২:৩০-১টা: একই সময় প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতার একটি অংশ দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেয়। তারা সেখানে প্রতিবাদস্বরুপ স্লোগান দিতে থাকে এবং অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। প্রশাসনের কর্মকর্তারা পুনরায় তাদের শান্ত করার চেষ্টা চালান।
  • ৬ এপ্রিল বিকাল: পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে এলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এলাকায় টহল জোরদার করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহমেদ উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত হয়ে আইনের ওপর আস্থা রাখতে আহ্বান জানান এবং আশ্বাস দেন যে “যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। তাঁর এ আশ্বাসে পরিস্থিতি আরও শান্ত হয় এবং বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়।
  • ৭ এপ্রিল ২০২৫: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অখিল চন্দ্র মন্ডলের অবস্থা স্থিতিশীল হলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। দেলদুয়ার থানার তদন্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক হাওলাদার জানান যে, অখিলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং তাঁর চিকিৎসা শেষে অদ্য সকালেই তাকে টাঙ্গাইল আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে গণমাধ্যমকে জানান। ৭ এপ্রিল দুপুর নাগাদ অখিলকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড/জেল হাজতে পাঠানোর আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানা গেছে।

জড়িত ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ

অখিল চন্দ্র মন্ডল: ৪০ বছর বয়সী হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তি, পেশায় স্বর্ণকার (গহনার কারিগর/দোকানি)। তিনি দেলদুয়ার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া গ্রামের গেদু চন্দ্র মন্ডলের ছেলে। কিছু প্রতিবেদন তাকে “অখিল চন্দ্র সরকার” নামেও উল্লেখ করেছে, তবে স্থানীয় সূত্রমতে মন্ডল পদবীটিই প্রচলিত। অখিলই সেই ব্যক্তি যিনি ফেসবুকে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত পোস্টটি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং গণপিটুনির শিকার হন।

স্থানীয় মুসলিম জনগণ: দেলদুয়ার বাজার ও আশপাশের এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা অখিলের পোস্টে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে জড়ো হন। এদের মাঝেই অনেকে “তৌহিদী জনতা” হিসেবে সংগঠিত হয়ে দোকান ঘেরাও ও বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়। স্থানীয়দের বক্তব্য ছিল যে মহানবী (সা.)-এর অবমাননা করার কারণে ওই যুবকের “বাংলার মাটিতে জায়গা হবে না” এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিক্ষোভে সামিল একদল তরুণের পরিচয় পাওয়া গেছে যারা নিজেদেরকে “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, টাঙ্গাইল” নামক একটি সংগঠনের স্থানীয় কর্মী বলে দাবি করে। ওই সংগঠনের জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক সামিউল আলিম এবং যুগ্ম সদস্যসচিব সামুরাতুল ইসলাম ছামিন গণমাধ্যমের কাছে উগ্র প্রতিক্রিয়াসূচক মন্তব্য দেন – তারা মনে করেন দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য একটি চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং নবীজিকে অবমাননার দায়ে অভিযুক্তদের “দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি” দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ: দেলদুয়ারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাব্বির আহমেদ এই সংকট মোকাবেলায় অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ঘটনার খবর পেয়েই তিনি দ্রুত থানার পুলিশ বাহিনী ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ইউএনও’র উপস্থিতি জনতার মধ্যে আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় এবং তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অখিলকে উদ্ধার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করেন। দেলদুয়ার থানার পুলিশ, বিশেষত তদন্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক হাওলাদার, ঘটনাস্থলে জনতাকে সামাল দেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেন। পুলিশ বাহিনী শুরুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেলেও তাদের দ্রুত পদক্ষেপে অখিলকে জনতার হাত থেকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পরবর্তীতে পুরো চিকিৎসা ও হেফাজতের সময়জুড়েই পুলিশ সদস্যরা তাকে পাহারা দিয়ে রাখেন।

সেনাবাহিনী: দাঙ্গাসদৃশ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের অনুরোধে সামরিক বাহিনীর একটি দল মোতায়েন করা হয়। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যরা যখন অভিযুক্তকে জনতার কবল থেকে বের করে আনেন, তখন সেনাবাহিনী তাদের সহায়তা করে নিরাপদে স্থানান্তর নিশ্চিত করে । পরবর্তীতে সেনা টিম এলাকায় টহল দিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া ও গণপিটুনির প্রেক্ষাপট

দেলদুয়ারের মতো উপজেলায় হঠাৎ করে এমন ধর্মীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক জনরোষের উদ্ভব অনেককে বিস্মিত করেছে। সাধারণভাবে ওই এলাকায় হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সহাবস্থান দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ ছিল বলে স্থানীয়রা জানান। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টির বহু নজির রয়েছে, যার খবর গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এমন প্রেক্ষাপটে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর পোস্টের খবরে স্থানীয় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রচণ্ড আঘাত লাগে এবং দ্রুত ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগ অনুযায়ী সামাজিক মাধ্যমে অখিলের ওই পোস্টের স্ক্রিনশট/ছবি ছড়িয়ে পড়ে, অন্যদিকে মুখে মুখে খবর ছড়াতে থাকে যে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলে “নবীর বিরুদ্ধে কটুক্তি” করেছে। এতে এলাকার মসজিদগুলোর নামাজের পর আলোচনা ও উসকানি, এবং বাইরের কিছু উগ্র মৌলবাদী প্রবণতার লোকজনের উপস্থিতি, পরিস্থিতিকে তাতিয়ে তোলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

গণপিটুনির ঘটনাটি মূলত স্থানীয় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলেও, এটি বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ‘নিজে হাতে আইন তুলে নেওয়া’র একটি উদাহরণ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। ইসলাম ধর্মের নবী সম্পর্কে অবমাননাকর কিছু পোস্ট হয়েছে শুনেই শতশত লোক ক্ষিপ্র হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয় – যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। জনতা অখিলের দোকান ভাঙচুর করে এবং তাকে মারধর করে আটকে রাখে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত তাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে পুলিশের উপস্থিতিতেও জনতার একাংশ উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে না রেখে দোকানে ঢুকে মারধর শুরু করে, যার ফলে গুরুতর আহত অবস্থায় অখিলকে উদ্ধার করতে হয়। জনতার এ ধরনের হাতাহাতি ও মারধরের ফলাফল ভয়াবহ হতে পারতো – বাংলাদেশে অতীতে এ ধরনের গণপিটুনিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রাণ হারানোর নজিরও রয়েছে

জনতার মধ্যে থেকে কিছু চরমপন্থী স্লোগান শোনা যায়। “নবীজিকে অপমান করলে তার জায়গা বাংলার মাটিতে হবে না” – এমন শ্লোগান এবং উগ্র ভাষণ ঘটনাস্থলে পরিবেশকে আরও ঘোলা করেছে। একটি তথাকথিত “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন” নামের ছাত্রগোষ্ঠীর নেতারা এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন এবং এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং “দেশকে অশান্ত করতে পরিকল্পিত চক্রান্ত” বলে প্রচার করেন। এমন প্রচারণা জনমনে সন্দেহ ও ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়।

ঘটনার পরপরই স্থানীয় হিন্দু পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অখিল যে সম্প্রদায়ভুক্ত, সেই হিন্দু সংখ্যালঘু পাড়ার লোকজন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। যদিও এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়নি যে জনতা অখিলের পরিবারের বাড়িঘর কিংবা মন্দিরে কোনো হামলা চালিয়েছে; মূল ক্ষোভটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছিল এবং প্রশাসনের দ্রুত তৎপরতায় তা সম্প্রদায়গত হামলায় রূপ নেয়নি। তারপরও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি হিন্দু পরিবারগুলো আতঙ্কে রাত কাটিয়েছে বলে জানা গেছে। অনেকে অস্থায়ীভাবে আত্মীয়ের বাড়ি বা অন্যত্র সরে যান কি না, সেই তথ্য নিশ্চিত নয়; তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ওই গ্রামে বাড়তি নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে যাতে কোনও পক্ষ সুযোগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা চালাতে না পারে।

ঘটনার সূত্রপাতের পেছনে কোনও ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত শোনা যাচ্ছে। কিছু স্থানীয় লোক দাবি করেছে যে অখিল চন্দ্র মন্ডল নাকি ISKCON সংগঠনের সাথে যুক্ত এবং সম্প্রতি ভারত থেকে ফেরত আসা এক যুবকের সঙ্গে মিলে তিনি এই কর্মকাণ্ড করে থাকতে পারেন। তবে এই দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ প্রকাশ পায়নি এবং প্রশাসনও এ ধরনের গুজবকে ভিত্তিহীন হিসেবে দেখছে। অনেকের মতে, হয়তো অখিলের একান্ত ব্যক্তিগত মত থেকেই তিনি পোস্টটি দিয়েছেন, কিংবা কারও সঙ্গে তর্কের জেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কাজ করেছেন। কেউ কেউ তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন – এটা স্পষ্ট নয় যে তিনি সচেতনভাবে উস্কানিমূলক কাজ করেছেন কি না। এ সমস্ত বিষয় তদন্তসাপেক্ষ।

প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা

পুলিশ শুরুতেই কৌশলী ভূমিকা নেয়। তারা সংখ্যায় জনতার তুলনায় কম হওয়ায়, শক্তি প্রয়োগ করে ভিড় ভাঙার চেষ্টা না করে, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। সেইসঙ্গে দ্রুত টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে পরিস্থিতির গুরুত্ব জানানো হয়। জেলা পর্যায় থেকে সম্ভাব্য সকল সহায়তা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসন কাছাকাছি সেনানিবাস/সেনা ইউনিটের সাথে যোগাযোগ করে প্রস্তুত থাকতে বলে। সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের নজির দেখা যায়, তবে টাঙ্গাইলে সম্ভবত সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বেশি কার্যকর মনে করে তাঁদেরই ডাকা হয় ।

যখন সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে, তবে জনতার একাংশ তখনও ক্ষুব্ধ ছিল। সেনা সদস্যরা পৌঁছে চারপাশে সতর্ক অবস্থান নেন এবং যেকোনো পুনরায় সংঘর্ষের সম্ভাবনা প্রতিহত করেন। তাদের উপস্থিতি জনতার মাঝে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে, ফলে উত্তেজনা কমে আসে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে অখিলকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়।

আহত অবস্থায় অখিলকে প্রথমে নিকটবর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, কিন্তু সেখান থেকে দ্রুত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁর নিরাপত্তার কারণে। জেলা পর্যায়ের সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি পুলিশি পাহারার ব্যবস্থাও সহজ হয়। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সদর হাসপাতাল) তাঁর চিকিৎসা চলাকালে পুলিশ বাহিনী কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রাখে যাতে কোনো উগ্রপন্থী লোক হাসপাতালে গিয়েও ক্ষতি করতে না পারে।

পরবর্তী সময়ে (৬ এপ্রিল বিকাল থেকে ৭ এপ্রিল) পুরো দেলদুয়ার উপজেলা জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে থানাকে নির্দেশ দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট গ্রাম ও আশপাশের হিন্দু বসতিগুলোতেও নজরদারি বাড়াতে। সম্ভাব্য যে কেউ গুজব ছড়িয়ে নতুন করে সংঘাত বাধানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক করার নির্দেশ দেয়া হয়। সাময়িকভাবে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে স্থানীয়রা যাতে আর উস্কানিমূলক কিছু শেয়ার করতে না পারে, সেদিকেও কর্তৃপক্ষ সতর্ক দৃষ্টি রাখে।

অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট/ডিসি এই ঘটনার পর প্রয়োজন অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারির মতো পদক্ষেপ নেবেন কি না, তা বিবেচনা করেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত থাকায় শেষ পর্যন্ত কারফিউ জারির প্রয়োজন হয়নি বলে প্রশাসন জানিয়েছে। জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা দেলদুয়ারের পরিস্থিতি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন এবং স্থানীয় জনগণ ও সংখ্যালঘু নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন যাতে ভুল বোঝাবুঝির মাটির উপর নতুন সংঘর্ষ দানা বাঁধতে না পারে।

স্থানীয় সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলা ঐতিহাসিকভাবে একটি মোটামুটি শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত, যেখানে হিন্দু ও মুসলমানরা বেশ কিছু গ্রামে পারস্পরিক সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছেন। উপজেলার জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু), যদিও তারা সংখ্যালঘু – আনুমানিক ১৫-২০% হতে পারে (সঠিক পরিসংখ্যান অনুপলব্ধ, তবে ২০১১ সালের আদমশুমারিতে টাঙ্গাইল জেলায় হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ৯% ছিল, দেলদুয়ারে যা কিছুটা বেশি হতে পারে)। স্থানীয় অর্থনীতি কৃষি ও ছোট ব্যবসা-কেন্দ্রিক, যেখানে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিভাজনের চেয়ে আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সামাজিক বন্ধনই বেশি গুরুত্ব পায়।

এর আগে দেলদুয়ার বা আশপাশের গ্রামগুলোতে উল্লেখযোগ্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা খুব কম শোনা গেছে। স্থানীয় প্রবীণরা বলেন যে দুর্গাপূজা, ঈদসহ নানা ধর্মীয় উৎসবে এলাকায় মিলেমিশে উৎসব পালনের সংস্কৃতি ছিল। ছোটখাটো গণ্ডগোল বা ভুল বোঝাবুঝি স্থানীয়ভাবে মিটমাট হয়ে যেত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় প্রেক্ষাপটে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রভাব তৃণমূলেও পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার খবর, ফেসবুকে গুজব ইত্যাদি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সংবেদনশীলতা বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২১ সালের শারদীয় দুর্গাপূজায় কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার গুজব ও পরবর্তীতে নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়িতে হামলার ঘটনা জাতীয়ভাবে আলোড়িত হয় এবং স্থানীয় মানুষের মনেও প্রভাব ফেলে (Fanatics in Bangladesh use Facebook to stoke communal tension, again )। এসব কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের কারও মনে ধারণা তৈরি হতে পারে যে “সংখ্যালঘুরা বারবার আমাদের ধর্মে আঘাত দিচ্ছে” – যদিও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণ হয়েছে যে এসব ঘটনার পেছনে উসকানিদাতা অন্য কেউ থাকে।

পূর্ববর্তী অনুরূপ ঘটনার প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে দেলদুয়ারের এই ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়; এর আগেও একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের উপর হামলা ও সহিংসতা দেখা গেছে। সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার সময়রেখা নিম্নরূপ:

  • ২০১২, রামু, কক্সবাজার: একটি ফেসবুক পোস্টে ইসলাম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৌদ্ধসংখ্যাগরিষ্ঠ একটি এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ গভীর রাতে উগ্র জনতা ১৯টি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির/বিহার ও প্রায় ৩০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় (রামু বৌদ্ধবিহারে হামলার এক যুগ আজ, থমকে আছে বিচারকাজ – Bangla Tribune)। আসলে এক বৌদ্ধ তরুণের নাম ব্যবহার করে ভুয়া আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে এই সহিংসতার উসকানি দেওয়া হয়েছিল বলে পরে তদন্তে উঠে আসে (২০১২ রামু সহিংসতা – উইকিপিডিয়া)। আজ অবধি রামু ঘটনার বিচার সম্পূর্ণ হয়নি এবং অপরাধীরা অনেকেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে (রামু বৌদ্ধবিহারে হামলার এক যুগ আজ, থমকে আছে বিচারকাজ – Bangla Tribune)।
  • অক্টোবর ২০১৬, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: এক হিন্দু যুবকের ফেসবুক পেজ থেকে (যা পরে সন্দেহ করা হয় হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পোস্ট দেওয়া) ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয় মসজিদ থেকে ঘোষণা করা হয়। ফলस्वরূপ ৩০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে নাসিরনগর উপজেলার কয়েকটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে সহিংস জনতা আক্রমণ চালায়। অন্তত ১৫টি মন্দির ও শতাধিক হিন্দু বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় (ফেসবুকের ছবি নিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুর – Benar News)। পরবর্তী তদন্তে অভিযোগ ওঠে যে এটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকেও উস্কানি পেয়েছিল। হিন্দু জেলে রসরাজ দাসের আইডি থেকে সেই পোস্ট গিয়েছিল, কিন্তু রসরাজ ছিলেন নিরক্ষর; ধারণা করা হয়, তাকে ফাঁসানো হয়েছিল (নাসিরনগর হামলা চার বছর আজ: শেষ হয়নি মামলার তদন্ত কাজ – Bangla Tribune)। দুঃখজনক হলো, নাসিরনগরের ঘটনায় ৫-৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অধিকাংশ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি এবং দোষীদের শাস্তি দূরে থাক, বিচারকার্যই শুরু হয়নি (নাসিরনগরে মন্দিরে-বাড়িতে হামলা: ৫ বছরে শেষ হয়নি তদন্ত) (নাসিরনগর হামলা চার বছর আজ: শেষ হয়নি মামলার তদন্ত কাজ – Bangla Tribune)।
  • অক্টোবর ২০১৯, বোরহানউদ্দিন, ভোলা: ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এক হিন্দু যুবক বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যের ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে ইসলাম-বিরোধী বার্তা ছড়ানোকে কেন্দ্র করে বিশাল জনসমাবেশ হয়। যদিও পরবর্তীতে জানা যায় তার আইডি হ্যাক হয়েছিল, তবুও ২০ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে পুলিশ ও বিক্ষোভকারী জনতার মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ গুলি চালায় এবং এতে ৪ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয় (ভোলায় পুলিশ-গ্রামবাসী সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত শতাধিক – Ekushey TV)। এ ঘটনা জাতীয়ভাবে তোলপাড় তোলে। তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল দোষী ছিল বাপন দাস নামের এক হ্যাকার, যিনি ওই হিন্দু যুবকের আইডি হ্যাক করে আপত্তিকর মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আদালত বাপন দাসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে (ধর্ম অবমাননা: হ্যাকার বাপন দাসের ৮ বছর কারাদণ্ড – SAMAKAL) (ধর্ম অবমাননা: হ্যাকার বাপন দাসের ৮ বছর কারাদণ্ড – SAMAKAL)। তবে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামের নির্দোষ যুবক এবং তার পরিবারকে ওই ঘটনার জন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
  • মার্চ ২০২১, শাল্লা, সুনামগঞ্জ: হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা মামুনুল হকের উস্কানিমূলক ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামের এক হিন্দু তরুণ ফেসবুকে সমালোচনামূলক পোস্ট দেন। এই অভিযোগে ১৭ মার্চ ২০২১ ভোরে শাল্লার ওই হিন্দু গ্রামে হাজারো উগ্রপন্থী লোক হামলা চালায়। পুঁচো লাঠিসোটা নিয়ে হাজির জনতা ৭০-৮০টি হিন্দু বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে (Fanatics in Bangladesh use Facebook to stoke communal tension, again )। পুলিশ আগেভাগে সেই তরুণকে গ্রেপ্তার করেও হামলা আটকাতে পারেনি। স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী পরবর্তীতে বহু অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু গ্রামটি আতঙ্কের ছাপ বহন করে চলেছে দীর্ঘদিন। এই ঘটনায়ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভূমিকা ও পুলিশের পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
  • অক্টোবর ২০২১, কুমিল্লা ও আশপাশের জেলা: শারদীয় দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লা শহরের একটি পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা পুরো দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কুমিল্লার ঘটনায় সরাসরি কোনো সংখ্যালঘু ব্যক্তির “পোস্ট” জড়িত ছিল না, তবে এর জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঢেউ ওঠে। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ইস্কন মন্দিরে হামলায় প্রাণহানি ঘটে, রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু পল্লিতে অগ্নিসংযোগ হয়, ফেনী, চাঁদপুরসহ বহু জেলায় মন্দির-ঘরবাড়ি আক্রান্ত হয় (Fanatics in Bangladesh use Facebook to stoke communal tension, again )। এসব ঘটনা দেখায় যে সামান্য উত্তেজনা কীভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যদি তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে সরকার কুমিল্লাসহ কয়েকটি জায়গায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে (Fanatics in Bangladesh use Facebook to stoke communal tension, again )।

উপরের ঘটনাগুলোর প্রতিটির পেছনের গল্প আলাদা হলেও একটি সাধারণ মিল রয়েছে: ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রেই পরবর্তীতে দেখা গেছে যে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি, পোস্টটি ফেক বা হ্যাকড ছিল, বা বিষয়টি অতিরঞ্জিত। তবে ততক্ষণে ক্ষতি হয়ে গেছে – প্রাণহানি, উপাসনালয় ও ঘরবাড়ি ধ্বংস, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে কোনো গোষ্ঠী মাঝে মাঝে পরিকল্পিতভাবে ভুয়া পোস্ট ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরি করে ফায়দা নিতে পারে, আবার কখনও কিছু ব্যক্তির ঔদ্ধত্য/দায়িত্বহীন কাজও এমন পরিস্থিতি ডেকে আনছে।

দেলদুয়ারের ঘটনাটি বাংলাদেশে ক্রমাগত পুনরাবৃত্ত সাম্প্রদায়িক ঘটনার শৃঙ্খলে আরেকটি সংযোজন, যা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ গুরুতর হুমকির মুখে পড়বে বলে সচেতন মহল মনে করেন (Fanatics in Bangladesh use Facebook to stoke communal tension, again )।

আইনি প্রতিক্রিয়া ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রাসঙ্গিকতা

দেলদুয়ারের ঘটনায় অভিযুক্ত অখিল চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে যেসব আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বা হবে, তার মূলটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর অধীন মামলা। পুলিশ ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ফেসবুকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা মূল্যবোধে আঘাত করা একটি গুরুতর অপরাধ। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ করে যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, তবে তার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।

অখিলের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে এই ধারা প্রয়োগ হতে পারে। এছাড়া জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দাঙ্গা সৃষ্টির অভিযোগেও (বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৯৫এ ধারা বা ১৫৩এ ধারা ইত্যাদি) চার্জ আনা হতে পারে, যেগুলো মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা সংক্রান্ত। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন বা জেল হাজতে প্রেরণের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ ও বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই দেশে-বিদেশে বহুচর্চিত ও বিতর্কিত। এই আইনের সমালোচনা বিভিন্ন মহল থেকে হয়েছে যে এটি বাক-স্বাধীনতা সীমিত করতে ব্যবহৃত হতে পারে এবং ইতোমধ্যে অনেক সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে এই আইনে হয়রানির অভিযোগ আছে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ – উইকিপিডিয়া)। বিশেষ করে আইনটির ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারা (যথাক্রমে অনলাইনে মানহানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আপত্তিকর প্রচার, বিদ্বেষ উদ্রেক ইত্যাদি) নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের আপত্তি আছে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ – উইকিপিডিয়া)। সম্পাদক পরিষদ এই আইনকে প্রত্যাখ্যান করে সংশোধনের দাবি জানায় এবং সরকার আশ্বাস দিয়েছিল পুনর্বিবেচনার (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ – উইকিপিডিয়া), যদিও কার্যত তেমন পরিবর্তন আসেনি।

এই মামলার অগ্রগতি কী হবে, তা সময় বলবে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে একটা ট্রেন্ড দেখা যায় – ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় অভিযুক্ত (যদি সংখ্যালঘু হন) তখনই কিছুটা ন্যায্য বিচারের সুযোগ পান যখন ঘটনা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে বা উচ্চ আদালত হস্তক্ষেপ করে জামিন ইত্যাদি দেয়। স্থানীয় স্তরে প্রাথমিকভাবে বেশ কড়াভাবেই বিষয়গুলো দেখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভোলার ঘটনায় হ্যাকিংয়ের প্রমাণ পাওয়ার পরও মূল ভুক্তভোগী যুবককে মামলা থেকে মুক্ত হতে আইনী লড়াই করতে হয়েছে; অথবা নাসিরনগরে রসরাজ দাস নির্দোষ প্রমাণ হলেও তাকে মাসের পর মাস আটক থাকতে হয়। তাই দেলদুয়ারের ঘটনায় অখিল চন্দ্র মন্ডলের আইনি লড়াই দীর্ঘ ও জটিল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একইসঙ্গে রাষ্ট্রকে নজর রাখতে হবে যাতে গণপিটুনির ঘটনায় জড়িতরা ছাড় না পেয়ে যায়। বাংলাদেশের আইনে গণপিটুনি বা জনতা দ্বারা বিচার নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য হলেও বাস্তবে এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার বা শাস্তির উদাহরণ বিরল। তবে সাম্প্রতিক বছরে সরকার গণপিটুনির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বাড়িয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে হত্যায় জড়িত থাকলে হত্যাকাণ্ডের মামলাও রুজু করেছে। দেলদুয়ারে অখিলের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে বটে, তবে যারা তাকে মেরেছে তারা আইনের উর্ধ্বে থাকতে পারে না। এই বার্তাটি পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে ভবিষ্যতে কেউ আইন হাতে তুলে নেয়ার আগে দু’বার চিন্তা করে।

গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া

দেলদুয়ারের ঘটনাটি জাতীয় কিছু গণমাধ্যমে শিরোনাম হিসেবে আসে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা সৃষ্টি করে। দেশের প্রধান বাংলা দৈনিকসমূহ সংক্ষিপ্ত আকারে খবরটি প্রকাশ করে – “ফেসবুকে অবমাননাকর পোস্ট, টাঙ্গাইলে হিন্দু যুবক আটক” শীর্ষক শিরোনামে ঘটনাটির বিবরণ দেয় তারা। এসব প্রতিবেদনে সাধারণত উল্লেখ করা হয় যে জনতার মারধরে আহত যুবককে পুলিশ উদ্ধার করেছে এবং এলাকায় উত্তেজনা চলছে ( অপরাধ | Ekotar Kantho)। যেমন সমকাল পত্রিকার খবরে উল্লেখ ছিল যে আটককৃত অখিলের বাড়ি দেলদুয়ার দক্ষিণপাড়ায় এবং তাকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে (অশোভন কার্টুন ছড়ানোয় যুবককে মারধর করে পুলিশে দিল জনতা – SAMAKAL)। বেশিরভাগ গণমাধ্যমই প্রশাসনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপোর্টাল (যেমন “একতার কণ্ঠ” ইত্যাদি) বেশি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বিএনপি নেতার ভূমিকাসহ ঘটনার খানিক বিশদ বর্ণনা ছিল ( অপরাধ | Ekotar Kantho) ( অপরাধ | Ekotar Kantho)।

গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মূলধারার বাংলা মিডিয়া বেশ সাবধানীভাবে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। তারা কোনও প্রকাশিত কার্টুন বা অবমাননাকর বক্তব্যের বিবরণ দেয়নি। তথাকথিত কটূক্তি আসলে কী বিষয় তা উল্লেখ করা থেকে বিরত থেকেছে। কিছু পত্রিকা প্রশাসনের প্রশংসা করেছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, আবার কেউ কেউ প্রশ্নও তুলেছে কীভাবে এ ধরনের পোস্ট এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং জনতা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিতে আগ্রহী হয়।

মানবাধিকার সংগঠন এবং সংখ্যালঘু অধিকার ফোরামগুলো এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ঘটনার পরদিন “বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ” এবং “বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ” এর নেতৃবৃন্দ স্থানীয় শাখার মাধ্যমে ঘটনার খোঁজখবর নেন এবং সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান যেন অখিল চন্দ্র মন্ডলের যথাযথ নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। একইসাথে তারা দাবি করেন, যদি ওই যুবক সত্যিই অপরাধ করে থাকেন, তবে তার বিচারের ভার সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, কোনও ভাবেই জনগণের হাতে ন্যায়বিচার চলতে পারে না – এ বিষয়টি সমাজে বোঝাতে হবে।

বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আসক (আইন ও সালিশ কেন্দ্র)অধিকার এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে আসছে। তাদের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামাজিক গুজব ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে এবং প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। দেলদুয়ারের ঘটনার পরপর কোন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও, এই ঘটনাকে তারা সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই দেখছেন। আসক-এর একজন প্রতিনিধি বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় আমরা দ্বৈত সংকটে পড়ি – একদিকে সংখ্যালঘু ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, যা অবশ্যই নিন্দনীয়; অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়ায় বহুগুণ বেশি মাত্রায় পুরো সম্প্রদায়ের উপর হামলা কিংবা অভিযুক্তকে পিটিয়ে আহত/হত্যা, যা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রকে উভয়ই প্রতিহত করতে হবে”

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অতীতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। ২০২১ সালের দুর্গাপূজার দাঙ্গার সময় তারা বিবৃতিতে বলেছিল যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বারবার এমন হামলার ঘটনা চলতে দেওয়া যায় না (Bangladesh: Protection of Hindus and others must be ensured amid …)। দেলদুয়ারের ঘটনার পরেও ধারণা করা হচ্ছে অ্যামনেস্টি বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। কেননা, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘু অধিকার – তিনটির সঙ্গেই জড়িত একটি ইস্যু। একজন নাগরিক সামাজিক মাধ্যমে কি বলবেন না বলবেন তা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়লেও, অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে তার আইনি পরিণতি হতে পারে – কিন্তু সে জন্য তার প্রাণনাশের হুমকি বা মার খাওয়া কোনোমতেই যুক্তিযুক্ত নয়।

মিডিয়ার আরেকটি করণীয় ছিল ঘটনার পর যথাযথ ফলো-আপ রিপোর্টিং করা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক সময়ই দেখা যায়, এমন ঘটনায় প্রথমদিন বেশ হৈচৈ হলেও পরে তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চললে আর আপডেট খবর হয় না।

তথ্যসূত্র: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্যের উৎস হিসেবে বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন, আইন-বিষয়ক প্রাসঙ্গিক নথি ও মানবাধিকার সংস্থার পর্যবেক্ষণকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সূত্রের মধ্যে আছে দৈনিক সবুজের জেলা সংবাদ (টাঙ্গাইলে নবীকে নিয়ে কটুক্তি করায় যুবক আটক | DAILY SABUJ) (টাঙ্গাইলে নবীকে নিয়ে কটুক্তি করায় যুবক আটক | DAILY SABUJ), স্থানীয় নিউজ পোর্টাল একতার কণ্ঠ ( অপরাধ | Ekotar Kantho) ( অপরাধ | Ekotar Kantho), সময়ের কণ্ঠস্বরের বিশেষ সংবাদ ( টাঙ্গাইলে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি হিন্দু যুবক আটক ) ( টাঙ্গাইলে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি হিন্দু যুবক আটক ), বিডিনিউজ২৪-এর বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন (Fanatics in Bangladesh use Facebook to stoke communal tension, again ) (Fanatics in Bangladesh use Facebook to stoke communal tension, again ), প্রাসঙ্গিক উইকিপিডিয়া নিবন্ধসমূহ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ – উইকিপিডিয়া) (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ – উইকিপিডিয়া) প্রভৃতি। সম্পূর্ণ তালিকা নিচে দেয়া হলো:

তারিখ: ০৮ এপ্রিল, ২০২৫

আরো খবর পড়ুন

মুর্শিদাবাদ বিক্ষোভ
ধর্ম

মুর্শিদাবাদ বিক্ষোভ: বাংলাদেশ ও ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত সহিংসতার অভিযোগ

সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি, ধুলিয়ান এবং সামসেরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ঘটে যাওয়া সহিংসতা রাজ্যের গোয়েন্দা মহলে গভীর উদ্বেগ ও নানা

Read More »
ছায়ায় প্রতিবন্ধী নারীরা
বাংলা

নিরাপত্তাহীনতার ছায়ায় প্রতিবন্ধী নারীরা: রংপুর, হবিগঞ্জ ও পিরোজপুরে প্রতিবন্ধী নারীদের উপর যৌন সহিংসতার ভয়াবহ অভিযোগ

বাংলাদেশের তিনটি জেলার পৃথক তিনটি ঘটনায় প্রতিবন্ধী নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলো একদিকে যেমন মানবাধিকারের চরম

Read More »
বিদেশী নারীকে ধর্ষণ Feni
নারী

বিদেশী নারীকে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে ফেনীতে মামলা, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

বাংলাদেশের ফেনী জেলার শর্শদি ইউনিয়নে থাইল্যান্ডের এক নারী নাগরিকের (৪০) দায়ের করা ধর্ষণ ও প্রতারণার মামলায় মোখসুদুর রহমান (৪৮) নামের

Read More »
ওয়াকফ আইন
ধর্ম

অশান্ত পশ্চিমবঙ্গ: বিতর্কিত ওয়াকফ আইন ঘিরে জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন

ভারতের সংসদে পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধন) আইন, ২০২৫-এর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায় ব্যাপক

Read More »
তামিলনাড়ুতে ঋতুস্রাবের
ধর্ম

ভারতের তামিলনাড়ুতে ঋতুস্রাবের সময় দলিত ছাত্রীকে বাইরে বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ

ভারতের তামিলনাড়ুতে ঋতুস্রাবের সময় দলিত ছাত্রীকে বাইরে বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঐ ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশে নিষেধ করা হয় এবং

Read More »
Scroll to Top