রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় এক মারমা তরুণীকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য এই তিন জেলায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
শনিবার বিকালে খাগড়াছড়ি শহরের য়ংড বৌদ্ধ বিহার এলাকা থেকে ‘খাগড়াছড়ি সচেতন ছাত্রসমাজ’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। তবে মিছিলটি পানখাইয়া পাড়া সড়কের মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তা আটকে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের একটি খালি পিকআপ ভ্যান সড়কে আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে মিছিলের গতি রোধ করা হয়, যার ফলে ঐ এলাকায় যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে।
এই বিষয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বাতেন মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, “নিরাপত্তার শঙ্কা থাকায় আমরা পানখাইয়া মোড়ে মিছিলটি আটকে দিয়েছি। তারা সেখানেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে।”
বিক্ষোভের পেছনে যে ঘটনা তাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে। মারমা তরুণী কাউখালী থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেন, মো. ফাহিম নামের এক ব্যক্তি তাকে ২৫ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। ১৩ এপ্রিল ফের তাকে বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এর প্রতিবাদ করলে ১৭ এপ্রিল অভিযুক্ত ব্যক্তি তরুণীকে মারধর করেন। নির্যাতনের পর তরুণী চিকিৎসার জন্য কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান এবং পরদিন থানায় মামলা করেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্ররা খাগড়াছড়িতে ‘খাগড়াছড়ি সচেতন ছাত্রসমাজ’ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কবিতা চাকমা বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বিনা কারণে বাধা দিয়েছে। আমাদের প্রতিবাদ করতে দেওয়া হয়নি। এই বাধা কি ধর্ষকের পক্ষের অবস্থান নির্দেশ করে?”
চম্পা মারমা নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা একজন ধর্ষণের শিকার মারমা তরুণীর জন্য বিচার চাইছি। অথচ পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। নাগরিক হিসেবে আমাদের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।”
এদিকে, মামলার প্রধান আসামি মো. ফাহিমকে বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কদম রসূল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাউখালী থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম সোহাগ জানান, “আমি নিজে অভিযান পরিচালনা করেছি। আমরা এখনো থানায় পৌঁছাইনি। বৃহস্পতিবার আসামিকে আদালতে তোলা হবে।”
মামলায় আরেক আসামি রিমন চাকমার ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে ওসি সোহাগ বলেন, “তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে।”
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল রাত পৌনে ১২টার দিকে ফাহিম ও রিমন চাকমা ভুক্তভোগী তরুণীকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান এবং মারধর করেন। এরপর তরুণী থানায় ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে ফাহিম এবং রিমনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ঘটনার প্রেক্ষাপটে পার্বত্য তিন জেলা—রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, একই সময়ের মধ্যে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের অভিযোগও সামনে আসে, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে। তবে বুধবার ধর্ষণ মামলার একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও, অপহৃত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এখনো কোনো খোঁজ দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তারিখ: ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: bdnews24, bdnews24, nagorik, manobkantha
Click here to read this article in English