পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ২ শিশুকে ধর্ষণের ভয়াবহ অভিযোগ। স্থানীয় মাদ্রাসার দুই ছাত্রকে ধর্ষণের পর তাদেরকে ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরআন ছুঁয়ে শপথ করানো হয় যেন তারা ঘটনাটি কাউকে জানাতে না পারে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক রেজওয়ান পারভেজ (২২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি টোকরাভাসা এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক রেজওয়ান পারভেজ দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। তিনি ছাত্রদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং ইসলাম ধর্মমতে পবিত্র গ্রন্থ কোরআন ছুঁয়ে শপথ করাতেন যেন তারা এই ঘটনা কাউকে জানাতে না পারে। কয়েকদিন আগে মাদ্রাসার আবাসিক ভবনের নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তিনি এক ছাত্রকে ধর্ষণ করেন।
সোমবার রাতে তারাবি নামাজের পর ওই ছাত্র তার পরিবারকে ঘটনাটি জানায়। বিষয়টি প্রকাশ পেলে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং শিক্ষককে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আরও এক ছাত্রের ওপর পাশবিক নির্যাতনের তথ্য জানতে পারে পুলিশ।
পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
মঙ্গলবার ভুক্তভোগী ২ মাদ্রাসা ছাত্রের মধ্যে একজনের অভিভাবক বাদী হয়ে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এ ছাড়া ধর্ষণের শিকার ছাত্রকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা বলেন, “১১ ও ১২ বছর বয়সী দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা শিক্ষকের এই নৃশংস অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের ওপর এমন অমানবিক অপরাধ করতে পারে।
মানবাধিকার সংগঠনের ভূমিকা
মানবাধিকার সংগঠনগুলো পঞ্চগড়ের এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করেছে, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে।
শেষ কথা
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠে আসা এই ঘটনা সমাজের অন্ধকার দিকটি আবারও উন্মোচিত করেছে। শিশুদের সুরক্ষা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পুলিশ ও প্রশাসনের তদন্ত এই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ঘটনা শুধু একটি অপরাধই নয়, এটি সমাজের নৈতিক অবক্ষয়েরও প্রতিচ্ছবি। শিশুদের সুরক্ষা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
তারিখ: ২০ মার্চ, ২০২৫
তথ্যসূত্র: manobkantha, deshrupantor
Click here to read this article in English
আরো খবর পড়ুন