মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় এক মর্মান্তিক ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় এক দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী (১৮) গভীর মানসিক আঘাতে পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। তাকে এক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর মেয়েটি মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ায় তাকে প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে এখন তাকে ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে আসামি হৃদয় হোসেন (২৫) দীর্ঘদিন ধরে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। হৃদয় বিবাহিত এবং তার সন্তান রয়েছে। মেয়েটির ভাই হৃদয়ের বড় দুই ভাইকে এ ব্যাপারে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
১৩ মার্চ রাতে মেয়েটি বাড়ির বাইরে গেলে হৃদয় তাকে চেতনানাশক দিয়ে অচেতন করে অজ্ঞাত এক স্থানে নিয়ে যান। সেখানে তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ছুরি দিয়ে হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করা হয় এবং ধর্ষণের ঘটনা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা হয়। এক সপ্তাহ ধরে তাকে আটকে রেখে বারবার ধর্ষণ করা হয়। পালানোর চেষ্টা করলে তাকে হত্যার হুমকি এবং ধর্ষণের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
১৯ মার্চ হৃদয়ের বড় ভাই জসিম উদ্দিন (৩৩) মেয়েটির ভাইকে ফোন করে বোনকে নিয়ে যেতে বলেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ফলে মেয়েটি “সাইকোসিস” বা মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে তাকে একটি আলাদা কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে। নার্সদের বক্তব্য, মেয়েটি “পাগলের মতো আচরণ” করছেন এবং অন্যান্য রোগীদের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন।
মেয়েটির ভাই জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। মামলায় হৃদয় হোসেন, জসিম উদ্দিন ও সুজন মিয়া (৩০)-কে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে শিবালয় থানা পুলিশ হৃদয়কে গ্রেপ্তার করেছে, তবে বাকি দুই আসামি এখনও পলাতক।
বাদীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার সুজন হোসেন বলেন, “স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নিয়ে শিবালয় থানা-পুলিশকে মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন আদালত। পরে আসামি হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।”
পুলিশের বক্তব্য: স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তদন্ত চলছে
মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান, “আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে। মেয়েটির মেডিকেল পরীক্ষা শিগগিরই করা হবে।”
মেয়েটির মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার মেয়ে এখন পাগল হয়ে গেছে। যারা এই নিষ্ঠুরতা করেছে, তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত।” পরিবারটি মেয়েটির চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে চরম অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে।
এই ঘটনা নারী ও কিশোরীদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত বিচার, ভুক্তভোগীর পূর্ণ চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এ ধরনের গভীর মানসিক আঘাত থেকে সুস্থ হতে দীর্ঘমেয়াদি থেরাপি ও সমর্থন প্রয়োজন।”
তারিখ: ২৯ মার্চ, ২০২৫
তথ্যসূত্র: dhakatribune, banglatribune