মুনতাসির রহমানকে বাদ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) কমিটি থেকে। দলটি শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আত্মপ্রকাশ করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক করে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে, কমিটিতে এলজিবিটিকিউ কর্মী মুনতাসির রহমান মুনের অন্তর্ভুক্তি ঘিরে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়, যার ফলে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
নতুন কমিটি ও বিতর্কের সূত্রপাত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গঠিত এই দলের কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। মুনতাসির রহমানের এলজিবিটিকিউ সমর্থনের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়লে, তা নিয়ে দলীয় ও সামাজিক স্তরে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ নিয়ে এনসিপির শীর্ষ নেতারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতিক্রিয়া
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। ফেসবুকে দেওয়া পৃথক পোস্টে তারা স্পষ্ট করেন যে, ইসলামিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছুই তাদের রাজনীতিতে স্থান পাবে না। হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে লেখেন:
“রাজনীতির আগেও আমার পরিচয়, আমি একজন মুসলমান। আমি আমার এই পরিচয় ধারণ করি, সবসময় করেই যাবো।
আমার বিশ্বাসকে কিংবা আমার দেশের মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করে কোনো রাজনীতি আমি কখনও করবো না। স্পষ্ট কণ্ঠে জানিয়ে দিতে চাই, ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছুই আমার বা আমাদের রাজনীতিতে কখনও জায়গা পাবে না।
যা হয়েছে, সেটা ছিলো একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমরা নির্ভুল নই। কোনো ভুল করলে আপনারা আমাদের নিজের ভাই মনে করে ভুল ধরিয়ে দেবেন, এবং ‘যদি’, ‘কিন্তু’, ‘অথবা’ ব্যাতিত আমরা আমাদের ভুল সংশোধন করে নিবো।”
হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট
একই ধরনের বক্তব্য দেন সারজিস আলমও।
সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্ট
সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুনতাসির রহমানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার ফেসবুকে লেখেন:
“আল্লাহর কসম! বঙ্গদেশে আমরা সমকামিতাকে চাই না।”
মাহিন সরকারের ফেসবুক পোস্ট
তিনি আরও বলেন, “মুনতাসির ভাই আমাদের সেফ হোমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, কিন্তু ওনার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত ছিলাম না।”
দলের অবস্থান পুনর্নির্ধারণ ও মুনতাসিরের বহিষ্কার
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশিদ বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি জানান, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত কেউ দলীয় পদে নেই এবং মুনতাসির রহমানকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। রিফাত রশিদ বলেন:
“একজন মুসলিম হিসেবে LGBTQ বা গে কমিউনিটিকে নৈতিক জায়গা থেকে আমি সমর্থন করি না। মুনতাসীর রহমান জুলাই অভ্যুত্থানকালে আমাদের যোগাযোগ মেইনটেইন করার জন্য অনেক বেশি সাহায্য করেছিলেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আমরা আটকা পরার পর সেখান থেকে আমাদের উদ্ধার করতে মুনতাসির রহমান আমাদের হেল্প করেন এবং এর পরবর্তীতেও জুলাইয়ের আন্দোলন চলাকালে উনি আমাদের সাথে কানেক্টেড ছিলেন। সেইসূত্রে তাকে আমরা হিউম্যান রাইটস এক্টিভিস্ট হিসেবেই জানতাম। কিন্তু আজকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পরেছে যা দেখে জানতে পারলাম তিনি LGBTQ এর সাথে জড়িত। ব্যপারটা বেশ বিব্রত করেছে আমাকে। আমি আবারও আমার এথিক্যাল পজিশন স্পষ্ট করছি যে “আমি কোনোপ্রকার সমকামিতাকে সমর্থন করি না।””
রিফাত রশিদের ফেসবুক পোস্ট
তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, চূড়ান্ত কমিটি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি থাকলে তা সংশোধন করা হবে।
এনসিপির নতুন কমিটি ঘোষণার পরপরই দলীয় সিদ্ধান্ত ও নীতির বিরুদ্ধে নানা বিতর্ক দানা বাঁধে। মুনতাসির রহমানের অন্তর্ভুক্তি ও পরবর্তীতে বহিষ্কার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
অন্যান্য সূত্রসমূহ: ঢাকা ট্রিবিউন ০১ মার্চ ২০২৫, নিউজ২৪বিডি ০১ মার্চ ২০২৫, ইনকিলাব ০১ মার্চ ২০২৫, আমাদের সময় ০১ মার্চ ২০২৫, ডেইলি ক্যাম্পাস ০১ মার্চ ২০২৫, যুগান্তর ০১ মার্চ ২০২৫
প্রকাশকাল: ১ মার্চ ২০২৫
Click here to read this article in English