লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক সেলুনমালিক এবং তার ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর সৃষ্ট তীব্র উত্তেজনায় শত শত মানুষ সেলুন এবং থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন, যা শান্ত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০ জুন (শুক্রবার) বিকেলে লালমনিরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোসলা বাজার এলাকায় অবস্থিত সেলুনে ধর্ম অবমাননার এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। নামজুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক সেলুনে দাড়ি কাটতে গেলে সেলুনমালিক পরেশ চন্দ্র শীল (৭৫) এবং তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল (৩৫) নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.), হযরত আয়েশা (রা.) এবং হজরে আসওয়াদ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনার পর নামজুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের জানালে ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা সেলুনের আশেপাশে জমায়েত হন এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে, ২২ জুন (রবিবার) দুপুরে স্থানীয়রা সেলুনে গিয়ে পরেশ চন্দ্র শীল এবং বিষ্ণু চন্দ্র শীলকে স্থানীয় উগ্রপন্থী মুসলমানরা ব্যাপক মারধোর করে। পরবর্তীতে পুলিশ পরেশ চন্দ্র শীল (৭৫) এবং তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল (৩৫) কে আটক করে। পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায় এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিক্ষোভ এবং সেনা মোতায়েন
পুলিশ অভিযুক্তদের আটক করার পরও স্থানীয়দের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। বিকেলের মধ্যে শতাধিক মানুষ লালমনিরহাট সদর থানায় জমায়েত হয়ে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
সেনাবাহিনী এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং আশ্বস্ত করেন যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরনবী মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা মেজর আমীর সাংবাদিকদের বলেন, “যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি আমরা সজাগ আছি যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়।”
পরিস্থিতির অবনতি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান
রোববার বিকেলের দিকে হাজারো মানুষ লালমনিরহাট সদর থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানায়। পুলিশ এবং সেনাবাহিনী তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে এবং আশ্বস্ত করে যে সুষ্ঠু বিচার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ধীরে ধীরে জনতা এলাকা ত্যাগ করে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মামলা দায়ের এবং আগাম কর্মসূচির ঘোষণা
পুলিশ জানায় যে পরেশ চন্দ্র শীল এবং বিষ্ণু চন্দ্র শীলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে এবং আইনানুগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে রেলওয়ে স্টেশন মসজিদ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন লালমনিরহাট শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব আতিকুর রহমান।
বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, এলাকা ছাড়া করার ঘটনা নতুন নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনায় পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে হেনস্থা ও নির্যাতনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক ও পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে এসব ঘটনার প্রকৃত দোষীরা বেশিরভাগ সময়ই থেকে যায় আইনের ধরা ছোয়ার বাইরে।
তারিখ: ২২ জুন, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: bdnews24, nagorik, dailyjanakantha
Click here to read this article in English