চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক মর্মান্তিক ঘটনায় লোকনাথ মন্দিরের সেবায়েত সুকুমার দাসের (৮০) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর সোমবার সকালে তাঁর বাসস্থানের পাশে পুকুরপাড়ে একটি আমলকী গাছের সঙ্গে দড়িতে বাঁধা অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। তবে এই মৃত্যুটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
এই ঘটনাটি ঘটেছে সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মধ্যম মাহমুদাবাদ এলাকায়। সুকুমার দাস ওই এলাকার একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি নিজে প্রতিষ্ঠিত লোকনাথ মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকাবাসী হতবাক হয়ে পড়েছেন।
ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সুকুমার দাসের লাশ তাঁর বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ে একটি আমলকী গাছের সঙ্গে দড়িতে বাঁধা অবস্থায় ঝুলছিল। এদিকে, উৎসুক জনতা লাশটি দেখার জন্য ভিড় জমায়।
সুকুমার দাসের দ্বিতীয় ছেলে ঝন্টু দাস জানান, তাঁর বাবা আত্মহত্যা করতে পারেন না। তিনি দাবি করেন, তাঁর বাবাকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝন্টু বলেন, “যেভাবে তাঁর শরীর মাটির সঙ্গে লাগানো ছিল, সেভাবে রশিতে ঝুলে কেউ আত্মহত্যা করতে পারেন না। তাঁকে হত্যা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, সুকুমার দাস নিয়মিত ও শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবনযাপন করতেন। তিনি প্রতিদিন রাত আটটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন এবং ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে মন্দিরে প্রার্থনা করতেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি সেখানে সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুকুমার দাসের লাশ উদ্ধার করে। তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড, তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মামলা করা হবে।”
সুকুমার দাস লোকনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেখানে সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মন্দিরটি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য একটি আধ্যাত্মিক ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। তাঁর এই মৃত্যু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে এবং গ্রামীণ এলাকায় পারিবারিক বিরোধের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই এই মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হবে। ময়নাতদন্তের ফলাফলই এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবে।
তারিখ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪