একটি রাষ্ট্র তখনই শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যখন আইনের শাসন, মানবিকতা ও ন্যায়বিচার সবকিছুর উপরে থাকে। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে এসব শব্দ যেন কেবল বইয়ের পাতায় আটকে আছে। আর বাস্তবে রাজনীতির নামে চলছে খোলাখুলি সন্ত্রাস, খুন, চাঁদাবাজি ও পৈশাচিক উন্মত্ততা। সম্প্রতি ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ঘটে যাওয়া চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ নামের এক ব্যবসায়ীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেই নির্মম উদাহরণ।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরও দেখা গেল না প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো প্রতিক্রিয়া, বরং যা স্পষ্ট তা হলো—যুবদলের (জাতীয়তাবাদী যুবদল) নামধারী কিছু সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করছে, লাশের উপর পাথর দিয়ে হামলা চালিয়ে বিকৃত উল্লাস করছে। শত শত সাধারণ মানুষের চোখের সামনে একজন মানুষকে কুপিয়ে, পিটিয়ে, পাথর দিয়ে থেঁতলে মারা হলো—তাও দিনের আলোতে, হাসপাতাল চত্বরে।
কেন সোহাগ?
প্রতিযোগিতা, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি—সব মিলিয়ে চাঁদা না দেয়ার অপরাধেই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকায় বৈদ্যুতিক কেবলের ব্যবসায় সোহাগের প্রভাব ছিল। সেই ব্যবসা দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু নামের দুজন ব্যক্তি। তাদের দাবি ছিল, ব্যবসার অন্তত ৫০% দিতে হবে, না হলে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। সোহাগ রাজি হননি। আর সেই ‘অপরাধে’ তার জীবন কেড়ে নেওয়া হলো।
এই কি আমাদের রাজনীতি?
বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠন যুবদল এখন কেবল রাজনৈতিক বিরোধিতা করছে না—তারা এখন হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার আর মানবিকতার অপমৃত্যুর রূপকার। অথচ, এই সংগঠনই একসময় গণতন্ত্রের কথা বলত, ভোটাধিকারের কথা বলত। আজ তাদের হাতে শুধু পাথর নয়, রক্ত লেগে গেছে।
প্রশাসনের নিরবতা: অজুহাত না অক্ষমতা?
ঘটনার ভিডিও ভাইরাল, প্রত্যক্ষদর্শী অজস্র, খুনি প্রকাশ্যে— কিন্তু প্রশাসনের দৃশ্যমান ব্যবস্থা কোথায়? কোথায় গ্রেপ্তার? কোথায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল? নাকি রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে আবারও বিচারহীনতার সংস্কৃতিরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে?
বাংলাদেশে এ ধরনের খুন নতুন নয়, কিন্তু খুনের পর লাশের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করার মতো পৈশাচিকতা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটা কেবল রাজনৈতিক সহিংসতা নয়—এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
কোথায় থামবে এই দানবতা?
আজ যদি রাষ্ট্র, প্রশাসন, রাজনীতি, এমনকি সাধারণ মানুষ এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়—তবে কাল এই নির্মমতা আরও বেশি ভয়ানক রূপ নেবে। খুনি যখন রাজনৈতিক পরিচয়ে বাঁচে, তখন বিচার মরে যায়। যখন রাষ্ট্র চুপ থাকে, তখন অপরাধীরা সাহস পায়।
আজ সময় এসেছে—সুশাসনের দাবি তোলার, বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর। যুবদলের এই জঘন্য কাণ্ড শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং পুরো জাতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আমরা কি এমন একটি বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
শেষ কথা:
হত্যাকারীরা যুবদলের হোক, আওয়ামী লীগের হোক, বা যে দলই হোক—এদের বিচার চাই, দ্রুত চাই, প্রকাশ্যে চাই।
রাষ্ট্রের নীরবতা মানেই পরোক্ষ মদদ। আর তা মানেই আমাদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত।
লেখক : অর্পি শারমিন
আর্টিস্ট
তারিখঃ ১২ জুলাই, ২০২৫
[মাইনোরিটিওয়াচে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]