রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক আবাসিক হোটেলে ১২ বছর বয়সী এক শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর তদন্তে ধর্ষণ ও পাশবিক হত্যাকাণ্ডের মর্মান্তিক বিবরণ উঠে এসেছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত ও আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, শিশুটিকে খাবারের লোভ দেখিয়ে হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত
গত ১২ জুলাই রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ১২ বছর বয়সী এক শিশু বরিশালগামী ট্রেনের সময় জানতে চাইলে আল-আমিন (৩৪) ও সাদ্দাম নামের দুই যুবক তাকে বিভ্রান্ত করে। তারা শিশুটিকে জানায়, বরিশালের দিকে কোনো ট্রেন চলাচল করে না। পরে শিশুটি তাদের জানায়, সে প্রায় একদিন ধরে কিছু খায়নি।
এসময় তারা শিশুটিকে খাবার ও জুতা কিনে দিয়ে তার আস্থা অর্জন করে। সন্ধ্যায় তারা শিশুটিকে যাত্রাবাড়ীর আনোয়ারা আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলের রেজিস্টারে আল-আমিন নামে রুম বুক করা হয়।
ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের নির্মম বিবরণ
পুলিশের তদন্ত ও আল-আমিনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ১২ জুলাই রাতেই তারা শিশুটিকে ধর্ষণ করে, যা তাকে গুরুতর অসুস্থ করে তোলে। পরের দিন সকালে তারা আবারও ধর্ষণের চেষ্টা করলে শিশুটি প্রতিবাদ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বেল্ট দিয়ে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
মরদেহ উদ্ধার ও তদন্তের অগ্রগতি
১৪ জুলাই হোটেল কর্তৃপক্ষ কক্ষটি তালাবদ্ধ দেখে পুলিশকে অবহিত করে। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।
মরদেহ পরীক্ষায় দেখা যায়, শিশুটির ঘাড় মটকে দেওয়া হয়েছে এবং শরীরে ধর্ষণের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্তে শ্বাসরোধ ও পায়ুপথে আঘাতের প্রমাণ মেলে।
আসামি গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি
১৯ জুলাই গাজীপুরের টঙ্গী থেকে আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি হত্যা ও ধর্ষণের দায় স্বীকার করেন। তার জবানবন্দি অনুযায়ী, সাদ্দাম নামে আরেকজন আসামি এখনো পলাতক।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাস্থল থেকে ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছে এবং হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে।
শিশুর পরিচয় ও আইনি প্রক্রিয়া
নিহত শিশুর পরিচয় এখনো অজানা। তার পরনে ছিল চেক শার্ট ও জিন্স প্যান্ট। শিশুটির পরিবারের সন্ধানে পুলিশ কাজ করছে। মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশু নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে আল-আমিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পলাতক আসামি সাদ্দামকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা চালাচ্ছে।
তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: dhakatribune, prothomalo, ittefaq, somoynews, bd-pratidin, dhakapost, jagonews24
Click here to read this article in English