ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শড়াতলা গ্রামে বাদ্যযন্ত্র, হকার এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিষিদ্ধ করে দেয়ালে সাঁটানো নোটিশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এই নোটিশ অপসারণ করা হয়। গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিক-উজ-জামান এই ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে নোটিশ সরানোর নির্দেশ দেন।
এই ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও তারিক-উজ-জামান। তিনি বলেন, কারা এই নোটিশ জারি করেছে এবং এর পেছনে কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নোটিশে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছিল বলে তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
নোটিশে মোট ১৯ জনের স্বাক্ষর ছিল। প্রথমে ‘টিএনও’ লেখা ছিল এবং একটি মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তবে কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি। নোটিশে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি এনামুল হক, ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী, শিক্ষক মজিবর রহমান, ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম, মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান, শিক্ষক আবু সালেহ, মসজিদের সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী, ইউপি সদস্য তৌহিদুর রহমান, মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহব্বত আলী, মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুল মালেক, কলেজ শিক্ষক ইন্তাজুল হক ও ফজলুর রহমান, ব্যবসায়ী নওয়াব মোল্লা, মসজিদের সাবেক সভাপতি মো. আজিম, ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, গোলাম মোস্তফা এবং শিক্ষক আবদুল ফাত্তাহ।
‘সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র ও হকার নিষিদ্ধকরণের নোটিশ’ শিরোনামে ওই কাগজে লেখা হয়েছিল, ‘এতদ্বারা শড়াতলা সকল গ্রামবাসীর পক্ষ হতে জানানো যাচ্ছে যে সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ করা হলো। যারা বাদ্যযন্ত্র বাজাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে তাদেরকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে এবং তাদের পিতা-মাতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে গ্রামবাসীর পক্ষ হতে আরো জানানো হচ্ছে, সকল প্রকার হকার ও হিজড়া নিষিদ্ধ করা হলো। যেহেতু আমাদের গ্রাম ৯৫% মানুষ শিক্ষিত ও ২০ জনের মতো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী আছে। নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে গ্রামবাসী এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।’
ইউএনও তারিক-উজ-জামান গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শড়াতলা গ্রামে যান এবং নোটিশে স্বাক্ষরকারীদের খোঁজ করেন। তিনি তাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। পরে দোকান ও বাড়ির দেয়ালে সাঁটানো নোটিশ সরিয়ে ফেলা হয়।
বেলা দুইটার দিকে ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামবাসীর চারজন সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইউপি সদস্য তৌহিদুর রহমানও ছিলেন। প্রথমে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে খুব চাপে আছি। আপনারা এখন যন্ত্রণা দিয়েন না।’ শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ঠিক হয়নি। গ্রামের সবাই একমত হওয়ায় তিনিও সঙ্গে ছিলেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি এনামুল হক বলেন, ‘কাজটি করা আমাদের ভুল হয়েছে, এর বেশি বলতে পারব না।’
সূত্রঃ প্রথম আলো ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
তারিখঃ ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫