পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে একটি পূজামণ্ডপে দুর্গা পূজা চলাকালীন পেট্রোল বোমা হামলা চালানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে এবং এর পরবর্তীতে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অন্তত পাঁচজন আহত হন। এই হামলায় এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ধর্মীয় উৎসবের সময় নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, একদল যুবক পাশের একটি গলি থেকে পূজামণ্ডপের দিকে পেট্রোল ভর্তি কাচের বোতল ছুড়ে মারে। বোতলটি বিস্ফোরিত না হলেও আগুন ধরে যায়। তখন স্বেচ্ছাসেবকরা হামলাকারীদের ধরতে এগিয়ে এলে তারা ছুরিকাঘাত করে। এতে পাঁচজন আহত হন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন দীপ্ত দে (২৬), ঝন্টু ধর (৫০), খোকন ধর (৪০), সাগর ঘোষ (২৬) এবং মো. রমিজ উদ্দিন (৩০)। তারা সবাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন যে, তাদের অবস্থা স্থিতিশীল এবং আশঙ্কাজনক নয়।
পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী উপস্থিত হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত তদারকি করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই হামলার পিছনে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা জড়িত থাকতে পারে। এ পর্যন্ত তিনজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জসীম উদ্দিন জানান, আটককৃত একজনের কাছ থেকে একটি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃত সন্দেহভাজনরা হলেন গাইবান্ধার আকাশ (২৩), পটুয়াখালীর মো. হৃদয় (২৩) এবং নোয়াখালীর মো. জীবন (১৯)। তারা বর্তমানে কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে রয়েছেন।
তবে তাঁতীবাজার পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় শাহ পুলিশের এই বক্তব্যের সাথে একমত নন। তিনি দাবি করেন, পেট্রোল বোমা হামলা এবং ছিনতাই দুটি আলাদা ঘটনা। পূজামণ্ডপে এই হামলা একটি সুনির্দিষ্ট নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড।
ঘটনাস্থলে রাত ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, পূজামণ্ডপের চারপাশে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা নিরাপত্তা জোরদার করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামলার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে।
পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবকরা নিয়োজিত ছিলেন। তাদের একজন জয় শাহ জানান, হামলাকারীরা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারার পর পালানোর চেষ্টা করে। স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের ধরতে এগিয়ে এলে তারা ছুরিকাঘাত করে। এতে চারজন স্বেচ্ছাসেবক এবং একজন দর্শনার্থী আহত হন।
ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, পূজামণ্ডপের পাশের একটি গলিতে তিন যুবক জড়ো হয়ে আলোচনা করছেন। কিছুক্ষণ পর তারা পূজামণ্ডপের দিকে এগিয়ে হামলা চালায়। এই ফুটেজ তদন্তে সহায়তা করছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তদন্ত চলমান।
তারিখ: ১২ অক্টোবর, ২০২৪ [১]