নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশানে চুরি ও হত্যাকাণ্ডের মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর রাতে শ্মশানের প্রহরী তরুণ কুমার দাস (৬০) চুরি করতে দেখে ফেলায় একদল দুর্বৃত্তের হাতে নিহত হন। পরের দিন সকালে তাঁর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের তদন্তে এ ঘটনায় এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি পাঁচজনকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ঘটনার সূত্রপাত
২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর রাতে ছয় সদস্যের একটি চোরাচালান দল নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশানে চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে। গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন সবুজ হোসেনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তারা প্রথমে শ্মশানসংলগ্ন একটি লেবুবাগান থেকে এক বস্তা লেবু চুরি করে। এরপর দেয়াল টপকে শ্মশানে প্রবেশ করে গাঁজা সেবন করে। পরে তারা মন্দিরের দানবাক্স ও কাঁসার থালাবাসন চুরির সিদ্ধান্ত নেয়।
এই সময় শ্মশানের প্রহরী তরুণ কুমার দাস রাত্রিযাপনের জন্য মন্দিরে প্রবেশ করেন। তিনি চোরদের চুরি করতে দেখে ফেলেন এবং দ্রুত সেখান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু চোরেরা তাঁকে ধরে ফেলে, হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে। শ্বাস নিতে না পেরে তরুণ কুমার দাসের মৃত্যু হয়। চোরেরা দানবাক্স ও থালাবাসন চুরি করে পালিয়ে যায়। [১]
লাশ উদ্ধার ও প্রাথমিক তদন্ত
পরের দিন, ২১ ডিসেম্বর সকালে শ্মশানের কর্মচারীরা ভোগঘরের বারান্দায় তরুণ কুমার দাসের হাত-পা বাঁধা লাশ দেখতে পান। দানবাক্স ও ভান্ডারঘরের তালা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। কর্মচারীরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
শ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সত্যনারায়ণ রায় জানান, দানবাক্স ও ভান্ডারঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করা হয়েছে। তরুণ কুমার দাসের ছোট ভাই প্রদীপ কুমার দাস বলেন, তাঁর ভাই ২৫ বছর ধরে শ্মশানে প্রহরীর কাজ করতেন এবং তাঁর কোনো শত্রু ছিল না। তরুণের ছেলে তপু দাস পিতার হত্যার বিচার দাবি করেন।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, তরুণ কুমার দাস চুরি করতে দেখে ফেলায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। [২]
সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার
২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারি নাটোর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফাত হোসাইন এক সংবাদ সম্মেলনে সবুজ হোসেন নামের এক যুবকের গ্রেপ্তারের কথা জানান। সবুজ স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয় সদস্য ছিল। সে পুলিশের কাছে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে।
সবুজের বরাত দিয়ে জানা যায়, ২০ ডিসেম্বর রাতে সে ও তার পাঁচ সহযোগী শ্মশানে চুরি করে এবং তরুণ কুমার দাসকে হত্যা করে। সবুজ ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যায় এবং বিদেশে পালানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশ চট্টগ্রামের শাহ আমানত এলাকায় তাকে গ্রেপ্তার করে। বাকি পাঁচ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। তরুণ কুমার দাসের পরিবার ও শ্মশান কমিটি দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। এলাকাবাসী মহাশ্মশানের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশের বক্তব্য
নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, “ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্তে চুরি ও হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ মিলেছে। আমরা গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি এবং বাকি অপরাধীদের ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।” [৩]
প্রকাশনার তারিখ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫