নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় স্বামীকে আটকিয়ে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সেই ভিডিওর মাধ্যমে হুমকি দিয়ে এক কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় আটদিন পর মামলা গ্রহণ করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের গাফিলতি ও বিচারপ্রক্রিয়ার বিলম্ব নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।
ঘটনার বিস্তারিত
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর পরিবারের ভাষ্যমতে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ অনুযায়ী, ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার মনিরের ছেলে নাজমুল (২৫) এবং তার বন্ধু রনি (২৫) ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হয় এবং নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে নাজমুল ও রনি পর্যায়ক্রমে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।
ভুক্তভোগী নারী নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী এবং স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার স্বামীও আরেকটি পোশাক কারখানার কর্মী। তারা প্রেমের সম্পর্কের পর ১০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে পরিবারের অমতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং আলাদা বাসায় ভাড়া থাকতেন।
অভিযুক্তদের পরিচয় ও মামলা গ্রহণে বিলম্ব
ভুক্তভোগী ও তার স্বামীর অভিযোগ, ঘটনার রাতেই তারা থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি জানান। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ আমলে না নিয়ে দীর্ঘ সময় থানায় বসিয়ে রাখে। ঘটনার আটদিন পর, ২৬ ফেব্রুয়ারি, রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা গ্রহণ করা হয়।
বিডিনিউজ২৪-এর প্রতিবেদনে (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, “ঘটনার রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেই এবং মেডিকেল পরীক্ষা করতে বলি। কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনও কথা শোনেননি। থানায় ওসি নেই জানিয়ে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
অন্যদিকে, কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) জানানো হয়, পুলিশ মামলা গ্রহণে বিলম্ব করার পাশাপাশি ভুক্তভোগীকে ‘মীমাংসার’ পরামর্শ দেয়। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
স্বামীর বর্ণনা ও পুলিশের গাফিলতি
ভুক্তভোগীর স্বামী আরও বলেন, “আমার স্ত্রী অসুস্থবোধ করায় ওষুধ নিয়ে তার বাসায় গিয়েছিলাম। বাসার বাইরে আসার পরই বাড়ির মালিকের ছেলে ও তার বন্ধুরা আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হয় এবং সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা হয়।”
তিনি আরও জানান, “আমি কোনওভাবে পালিয়ে এক বন্ধুর মোবাইল থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। পরে স্ত্রীর কাছে গিয়ে দেখি, সে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। পুলিশ এলে আমরা থানায় যাই, কিন্তু তারা মামলা নেয়নি।”
পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন এবং খুদেবার্তায়ও কোনও সাড়া দেননি।
তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, “মামলা নিতে বা মেডিকেল পরীক্ষা করাতে দেরি করা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করা হবে। যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিচারের দাবিতে আন্দোলন ও ভুক্তভোগীদের শঙ্কা
ভুক্তভোগী ও তার স্বামী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, পুলিশের গাফিলতির কারণে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তারা জানান, “আমরা তো ভরসাই পাচ্ছি না। ধর্ষণের ঘটনা পরিবারের কাউকে জানাতে পারিনি, কারণ আমরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
অবশেষে মামলা, কিন্তু তদন্ত কতটা সুষ্ঠু হবে?
অবশেষে, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় নাজমুল ও রনির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে একাধিক টিম কাজ করছে।
তবে, পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা গ্রহণে দীর্ঘ বিলম্ব ও ভুক্তভোগীর প্রতি উদাসীনতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ নতুন কিছু নয়, তবে এমন একটি জঘন্য অপরাধের ঘটনায় প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে বিলম্বের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব পালনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র: ১. বিডিনিউজ২৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২. কালের কণ্ঠ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
তারিখ: ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫