২০২৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা-রাজশাহীগামী একটি বাসে যাত্রীদের জন্য এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছিল। একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা বাসটি দখল করে রেখে যাত্রীদের লুটপাটের শিকার করে। সেই সঙ্গে বাসের মধ্যেই অন্তত একজন হিন্দু নারীকে ধর্ষণ এবং আরও কয়েকজনকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার শুরু
‘আমারি ট্রাভেলস’-এর অধীনে পরিচালিত ‘ইউনিক রোড রয়্যালস’ পরিবহনের বাসটি ঢাকার গাবতলী টার্মিনাল থেকে রাত ১১:৩০ মিনিটে ছেড়ে যায়। বাসটিতে প্রায় ৬০-৬৫ জন যাত্রী ছিলেন, যা আসনের ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি ছিল। ফলে অনেকেই দাঁড়িয়ে যাত্রা করছিলেন। পথে বাসচালক ও তার সহকারীরা আরও সাত-আটজন যাত্রীকে ওঠার সুযোগ দেন। তবে, এই অতিরিক্ত যাত্রীরাই ছিল পরিকল্পিত ডাকাত দলের সদস্য।
বাসে ওঠার পরপরই ডাকাতরা চালককে জিম্মি করে ফেলে। একজন চালকের আসনে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়, আর বাকিরা ধারালো অস্ত্র বের করে যাত্রীদের হুমকি দিতে থাকে। তাদের আদেশ ছিল—কেউ মাথা তুলবে না, চোখ খুলবে না। কেউ প্রতিরোধের চেষ্টা করলে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়। আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কয়েকজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাতও করা হয়।
লুটপাট ও যৌন নিপীড়ন
বাসের যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ২২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সোহাগ হাসান ও তার সহকর্মী ওমর আলী। তাদের কাছে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আনা বিপুল পরিমাণ টাকা ছিল। প্রথমে আংশিক টাকা দিলেও, বাসের স্টাফদের সহায়তায় ডাকাতরা তাদের বাকি অর্থ ছিনিয়ে নেয়। সোহাগকে নির্মমভাবে মারধর করে মাটিতে ফেলে রাখা হয়।
কিন্তু এই নারকীয় ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ডাকাতরা লুটপাটের পাশাপাশি নারী যাত্রীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালায়। বাসের মাঝামাঝি বসে থাকা দুই নারী ছিলেন মূল টার্গেট। তাদের মধ্যে একজন হিন্দু নারী, যিনি তার স্বামীর সঙ্গে ভ্রমণ করছিলেন। এক ডাকাত তাকে জোরপূর্বক বাসের পেছনে টেনে নিয়ে যায়। তার স্বামী বাধা দিতে গেলে তাকেও নির্মমভাবে প্রহার করা হয়। সহযাত্রীরা মহিলার কান্না ও আর্তনাদ শুনলেও, ডাকাতদের হুমকির কারণে কেউ সাহায্য করতে পারেননি।
আরেকজন নারী, যাঁর বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাকেও গুরুতরভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। বাসের মধ্যেই তার শ্লীলতাহানি করা হয়, এবং তার আর্তচিৎকারেও কেউ তাকে রক্ষা করতে পারেনি।
পরবর্তী পরিস্থিতি ও আইনি পদক্ষেপ
দীর্ঘ নির্যাতনের পর বাসটি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম এলাকায় পৌঁছায়। আতঙ্কিত যাত্রীরা পুলিশে অভিযোগ জানালে বাসচালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করা হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়।
এই ভয়াবহ ঘটনার পরও মামলা দায়ের নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যাত্রীরা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করলেও বড়াইগ্রাম ও মির্জাপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। এখনো পর্যন্ত নির্যাতনের ঘটনায় কোনো আনুষ্ঠানিক মামলা হয়নি, যা ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
তারিখঃ ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
সূত্রসমূহঃ যুগান্তর, বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো
Click here to read this article in English