ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় এক মাদ্রাসা ছাত্রকে ইফতারের বেঁচে যাওয়া দুই কোয়া কমলা খাওয়ার অপরাধে হাত-পা বেঁধে পিটানোর অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মথুরাপুর আদর্শ ইয়াতিমখানায়। নির্যাতনের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রকে বুধবার (৫ মার্চ) ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ ইমরান হাওলাদার ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান, “নির্যাতনের শিকার কিশোরটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।”
ঘটনার বিস্তারিত
ঘটনার সূত্রপাত হয় সোমবার (৩ মার্চ)। সেদিন এক ব্যক্তি মথুরাপুর আদর্শ এতিমখানায় শিশু-কিশোরদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেন। ইফতার শেষে কিছু কমলা বেঁচে যায়। ওই বেঁচে যাওয়া কমলার মধ্যে থেকে দুই কোয়া কমলা খেয়ে ফেলে ওই কিশোর ছাত্র। বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার সকালে শিক্ষক হাফেজ ইমরান হাওলাদার ছাত্রটিকে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে পিটানোর অভিযোগ ওঠে।
নির্যাতিত মাদ্রাসা ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা জানান, এতিমখানার ভেতরেই এই ঘটনাটি ঘটে। ছাত্রটির শরীরে লাঠি দিয়ে পেটানোর কারণে লাল দাগ পড়ে যায়। সহপাঠীরাও এই তথ্য নিশ্চিত করে। ঘটনার পর এলাকাবাসী এতিমখানায় জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দায়ী শিক্ষকের বিচারের দাবি জানান।
শিক্ষকের পলায়ন ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
ঘটনার পর পরই শিক্ষক হাফেজ ইমরান হাওলাদার এতিমখানা ছেড়ে পালিয়ে যান। এতিমখানা পরিচালনা কমিটি বিষয়টি জানার পর জরুরি বৈঠক করে। কমিটির সভাপতি মো. আলাউদ্দিন বলেন, “শিক্ষক ইমরানকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি এবং নির্যাতিত ছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে।”
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। দায়ী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
মানবাধিকার সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেন, এতিমখানার মতো একটি প্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা উচিত। এই ধরনের ঘটনা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই ঘটনায় তদন্তের দাবি উঠেছে। তারা বলছেন, শিশুদের প্রতি এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। ঝিনাইদহের মথুরাপুর আদর্শ এতিমখানায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শিশু অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি মর্মান্তিক উদাহরণ। এই ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ ইমরান হাওলাদার এখনও পলাতক।
তারিখ: ৬ মার্চ ২০২৫
সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪
Click here to read this article in English