বরগুনায় নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়েরের মাত্র ছয় দিন পর হত্যার শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগী শিশুর বাবা মন্টু চন্দ্র দাস (৩৫)। গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাতে বরগুনা পৌরসভার কালিবাড়ি এলাকায় নিজ বাড়ির পেছনের একটি ঝোপঝাড় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মন্টু বরগুনা পৌর শহরের জাকির হোসেন নামে এক মুরগি ব্যবসায়ীর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। তার স্বজনদের দাবি, ধর্ষণ মামলার জেরে অভিযুক্তের স্বজনরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ঘটনার পটভূমি
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মার্চ মন্টু চন্দ্র দাস বরগুনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, তার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের পর ধর্ষণ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের দিনই পুলিশ অভিযুক্ত সৃজীব চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে এবং আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। তবে মামলার পর থেকেই মন্টু ও তার পরিবারকে অভিযুক্তের স্বজনরা হুমকি দিচ্ছিল বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার।
হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাত ১টার দিকে স্থানীয়রা মন্টুর মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের স্ত্রী শিখা রানী দাস জানান, রাতে মন্টু তাকে ফোন করে জানায়, মুরগি দোকানে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে। তবে দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও তিনি বাড়ি ফিরলে না। পরে শিখা রানী মন্টুর মোবাইল ফোনে কল দিলে বাড়ির পেছনের ঝোপঝাড় থেকে মোবাইলের রিংটোন শুনতে পান। সেখানে গিয়ে তিনি মন্টুর মরদেহ দেখতে পান। মরদেহের পরনের কাপড় ভেজা ছিল, হাতে কামড়ের দাগ এবং সারা শরীরে কাদা মাখা অবস্থায় পাওয়া যায়।
পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধারণা করছে, শ্বাসরোধ করে মন্টু চন্দ্র দাসকে হত্যা করা হয়েছে। বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম জানান, মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল তদন্তে বিষয়টি হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পরিবার যাদের সন্দেহ করছেন, তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
পরিবারের বক্তব্য
নিহত মন্টু চন্দ্র দাস এর স্ত্রী শিখা রানী দাস অভিযোগ করে বলেন, “সপ্তাহখানেক আগে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা করেছিলেন মন্টু। সেই মামলার প্রধান আসামি জেল হাজতে রয়েছে। ওই আসামির বন্ধু ও স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আমার ধারণা।” তিনি আরও জানান, তাদের তিন মেয়ে, যার মধ্যে ছোট সন্তানের বয়স মাত্র এক মাস। মন্টুই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
মন্টু চন্দ্র দাস এর বোন কনক রানী দাস বলেন, “গতকাল সন্ধ্যার দিকে মন্টুর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। এ সময় তিনি জানান, ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছে। আমি তাকে সাবধানে থাকতে বলি। পরে রাতে মন্টু বাড়ি ফেরেনি এমন খবর শুনে তার বাড়িতে গিয়ে বাড়ির পিছনে মন্টুকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি।”
পুলিশের তদন্ত ও ব্যবস্থা
বরগুনা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতোমধ্যে চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, মামলার প্রধান আসামি বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। তবে তার স্বজন ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ গোপন তদন্ত শুরু করেছে এবং তথ্য যাচাই-বাছাই ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
তথ্যসূত্র: dhakapost, channel24, dhakatribune, ntv
তারিখ: ১২ মার্চ ২০২৫
Click here to read this article in English