মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরও দুটি মর্মান্তিক ঘটনা বাংলাদেশের আশুলিয়া ও মেহেরপুরে ঘটেছে, যেখানে শিশুদের নিরাপত্তা ও অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। আশুলিয়ায় সৎ বাবাদের বিরুদ্ধে দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, অন্যদিকে মেহেরপুরে ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশের হুমকি দেওয়া এবং পুলিশের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাগুলো শিশু অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতার চরম উদাহরণ।
আশুলিয়ায় সৎ বাবার বিরুদ্ধে দুই শিশু ধর্ষণের অভিযোগ
সাভারের আশুলিয়া উপজেলার গনকবাড়ী ও নিশ্চিন্তপুর এলাকায় দুইটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তাদের সৎ বাবার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিশুদের মা আশুলিয়া থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছেন।
গনকবাড়ী এলাকার ঘটনায় জানা যায়, প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তিন কন্যাশিশুকে নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন এক নারী। গত ৯ মার্চ তার ১০ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় তার দ্বিতীয় স্বামী। এই ঘটনায় মা আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
অন্যদিকে, নিশ্চিন্তপুর এলাকায় আরেকটি শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় মা দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে ৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তার সৎ বাবা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি জানায়, এর আগেও তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা সৎ বাবাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মেহেরপুরে শিশু ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশের হুমকি ও থানা ঘেরাও
মেহেরপুরে ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের মামলায় জামিন পাওয়া আসামিরা ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) আসামিদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৯ সেপ্টেম্বর, যখন মেহেরপুর সদর উপজেলার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী পরিবারের ৯ বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করে বায়েজিদ নামের এক যুবক। ধর্ষণের সময় সহযোগীর মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করা হয়। শিশুটির মা বাদী হয়ে বায়েজিদ, আলামিন ও বরকত আলী নামের তিনজনকে আসামি করে মেহেরপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের হুমকি দিয়ে বাদীকে মামলা তুলে নিতে বলে। ভুক্তভোগী পরিবার প্রতিকার চেয়ে মেহেরপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর থানার এসআই সুজয় কুমার উভয় পক্ষকে নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসআই সুজয় কুমার আসামিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাদীকে চাপ দিতে থাকেন।
এসময় এসআই সুজয় কুমারের সাথে থানার মধ্যেই কয়েকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন সদর থানা ঘেরাও করে এবং এসআই সুজয় কুমার ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর একটি দল থানায় গিয়ে অবস্থান নেয়। মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকছুদা খানম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপার এসআই সুজয় কুমারকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা থানা চত্বর ত্যাগ করে।
মানবাধিকার সংকট ও ন্যায়বিচারের দাবি
আশুলিয়া ও মেহেরপুরের এই ঘটনাগুলো শিশু অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতার চরম উদাহরণ। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি, পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের অভিযোগগুলো তদন্ত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শিশু অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী জোরালো ভূমিকা রাখা সংগঠনগুলো বাংলাদেশে শিশু নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনাগুলো শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বব্যাপী শিশু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। শিশুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।
তথ্যসূত্রঃ Ittefaq, Independent
তারিখঃ ১৫ মার্চ, ২০২৫
Click here to read this article in English