ভোলার চরফ্যাশনে তারাবি নামাজ পড়তে আসা ১০ বছরের এক শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম কারী মো. তালহা (১৯)। সে চরফ্যাশন পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ পাড়ার বাসিন্দা এবং মোস্তাক মাওলানার ছেলে। শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাতে তারাবির নামাজের সময় চরফ্যাশন সদরের খাস মহল জামে মসজিদের তৃতীয় তলায় এ ঘটনাটি ঘটে। তবে, শনিবার রাতে তালহাকে গ্রেপ্তারের পরই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তা দ্রুত ভাইরাল হয়।
আহত শিশুটি বর্তমানে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটি চরফ্যাশন পৌরসভার রেসিডেন্সিয়াল মডেল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে শিশুটির পরিবার অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার বিবরণ
সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শুক্রবার তারাবির নামাজের সময় এক ব্যক্তি ১০ বছর বয়সী শিশুটিকে নিয়ে চরফ্যাশনে অবস্থিত খাস মহল জামে মসজিদের সামনে ঘুরাফেরা করছেন। এরপর শিশুটিকে নিয়ে পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত ওই ব্যক্তি মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করেন। তিনি শিশুটিকে মসজিদের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর পাঞ্জাবি ও টুপি খোলা অবস্থায় শিশুটিকে মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি মসজিদের পিছন দিক দিয়ে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
শিশুর পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে তারাবির নামাজ পড়তে শিশুটি আলিয়া মাদ্রাসা মসজিদে যায়। সেখানে তার সঙ্গী মামাতো ভাইকে খুঁজে না পেয়ে বেরিয়ে আসার পথে পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক ব্যক্তি তাকে মোটরসাইকেলে ঘুরানোর প্রলোভন দেখিয়ে মোটরসাইকেলে তোলেন। মাদ্রাসার মাঠ ও হেলিপ্যাড এলাকায় ঘুরানোর পর কৌশলে শিশুটিকে খাস মহল জামে মসজিদের তৃতীয় তলায় নিয়ে বলাৎকার করেন। তারাবির নামাজ পড়তে আসা অন্য শিশুরা বিষয়টি লক্ষ্য করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে শিশুটির পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে চরফ্যাশনের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি দেখা দিলে চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠান।
চিকিৎসা ও তদন্ত
ভোলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তায়েবুর রহমান জানান, শিশুটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশুটি আশঙ্কামুক্ত রয়েছে।
চরফ্যাশনে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান হাওলাদারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
খাস মহল জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি ইত্তেফাককে জানান, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় চরফ্যাশনে স্থানীয় জনগণ ও শিশুটির পরিবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযুক্তের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে, যেখানে নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনাটির তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনাটি শিশু সুরক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সূত্র: ইত্তেফাক
তারিখ: ১৫ মার্চ, ২০২৫
Click here to read this article in English