নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ১৪ বছর বয়সী এক শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের মর্মান্তিক ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনাটি শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার মুশিন্দা এলাকায় সংঘটিত হয়। শনিবার (১৫ মার্চ) ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা স্থানীয় বড়াইগ্রাম থানায় মামলা দায়ের করার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে।
ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশী যুবক মনির হোসেন সরকার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে তার বাড়ি থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে আসে। এরপর তাকে পাশের একটি আম বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে কামরুল ইসলাম নামে আরেক যুবক তার ওপর যৌন নির্যাতন চালায়। প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে গিয়ে আম বাগানে উদ্ধার করে। এ সময় তারা ঘটনাস্থলে অভিযুক্তদের দেখতে পায় এবং তাদের আটক করার চেষ্টা করে।
পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে মনির হোসেন সরকার ও কামরুল ইসলামসহ মাহফুজ নামে আরেকজনকে আটক করে। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাহফুজকে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের বক্তব্য
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী কিশোরীকে থানায় এনে তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী কিশোরীর বাবা দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, কিশোরীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই এই ঘটনাকে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অবস্থা
ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবার এই ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। পরিবারের সদস্যরা জানান, কিশোরী শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তারা সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশীরাই এমন জঘন্য কাজে জড়িত হওয়ায় তারা হতবাক ও বেদনাহত। তারা ন্যায়বিচার চান এবং আশা করেন যে আসামিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।
আইনি প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
পুলিশ জানিয়েছে, তারা এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে এবং দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করবে। এ ধরনের ঘটনায় শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ ও প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে।
এই ঘটনাটি সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে সরকার ও প্রশাসনের কাছে দ্রুত বিচার ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
তারিখ: ১৬ মার্চ, ২০২৫
Click here to read this article in English