একটি ফেসবুক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলায় এক হিন্দু পরিবারের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকা। শনিবার রাতের এই ঘটনায় স্থানীয় মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত: ফেসবুক মন্তব্য বিতর্ক
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার বিকেলে, যখন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নীলফামারী জেলার একটি ইউনিয়নে শতবর্ষী বটগাছের ভেতর থেকে “ত্রিশুলযুক্ত একটি হাত” বের হওয়ার দাবি করে একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করে। ওই প্রতিবেদনের ফেসবুক পোস্টের নিচে শংকর সাহা নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে মুসলমানদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সানি জানান, মন্তব্যের স্ক্রিনশট দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। শংকর সাহা দাবি করেন, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে এবং তিনি সখিপুর থানায় জিডি করেন। তবে, তার এই দাবি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সন্দেহ তৈরি হয়।
রাতের আঁধারে হামলা: ভিডিও ভাইরাল
শনিবার রাতে তারাবি নামাজের পর বড়চনা বাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদের মুসল্লিরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে শংকর সাহার বাড়ির দিকে অগ্রসর হন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একদল যুবক ও তরুণ শংকর সাহার বাড়ির দরজা-জানালা, টিনের বেড়া ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করছে।
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন, “আমাদের পুলিশ বাহিনী চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা হামলা বন্ধের জন্য অনুরোধ করলেও কিছু যুবক শ্লোগান দিয়ে হামলা চালায়।”
লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগ
শংকর সাহা অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা তার বাড়ি লুট করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর গহনা, জমির কাগজপত্র সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাগ্যিস, আমার পরিবার বাইরে ছিল, নাহলে তাদেরও আঘাত করা হতো।”
পাল্টাপাল্টি মামলা: পুলিশ তদন্তে
ঘটনার পরদিন রোববার দুই পক্ষই সখিপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সবুজ নামে এক ব্যক্তি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে শংকর সাহার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অন্যদিকে, শংকর সাহার স্ত্রী শিউলি রানী বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা উভয় মামলার তদন্ত করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ফেসবুক মন্তব্যের কারণে হামলা: একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফেসবুক পোস্ট বা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে এ ধরণের ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে। গত ২৬ মার্চ প্রকাশিতমার্কিন ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও নিপীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে– বলে বলা হয়েছে। তবে, পুলিশের দাবি, সখিপুরের এই ঘটনাটি “ব্যক্তিগত বিরোধের ফলাফল, সম্প্রদায়গত সংঘাত নয়।”
তারিখ: ৩০ মার্চ, ২০২৫
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, dhakatimes24