চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর গ্রামে একটি হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রতিমা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সর্বজনীন শ্রীশ্রী মহাশ্মশান কালী ও শিব মন্দিরে এ হামলার ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা মন্দিরের ভেতরে ঢুকে প্রতিমা বাইরে এনে ভাঙচুর করে এবং পরে মন্দিরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়েছে।
হামলার সময় টিনশেডের তৈরি মন্দিরটি আগুনে সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। মন্দির কমিটির সভাপতি অমর মজুমদার জানান, আগুন লাগানোর আগে দুর্বৃত্তরা কালী প্রতিমাটি মন্দির থেকে টেনে বাইরে এনে পাশের জমিতে ফেলে দেয় এবং সেখানেই প্রতিমাটি ভেঙে ফেলে। এরপর তারা মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। রবিবার সকালে মন্দির কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মন্দিরটিকে ছাই হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেন।
মন্দির কমিটির সম্পাদক অজয় মজুমদার জানান, প্রায় দুই যুগ আগে সরকারি খাস জমিতে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং এলাকাবাসীর মধ্যে এটি ‘মহাশ্মশান কালী ও শিব মন্দির’ নামে পরিচিত। এলাকাটি একটি পাহাড়ি টিলার উপর অবস্থিত, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃতদেহ সৎকার করা হয় এবং মন্দিরটি তার পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে। মন্দির পরিচালনা কমিটির দাবি, জমি সংক্রান্ত কোনো বিরোধ নেই এবং সম্প্রতি মন্দিরটিকে পাকা করার জন্য নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে পিলার বসানো হয়েছিল বলেও জানান অজয় মজুমদার।
হামলার রাতে প্রবল বৃষ্টির কারণে স্থানীয়দের অনেকেই ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারেননি। তবে পরে প্রতিমা ভাঙার শব্দ শুনে তারা বিষয়টি আঁচ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গভীর রাতে শতাধিক লোকজন এসে মন্দিরে আগুন দেয় এবং পাশাপাশি মন্দিরের সীমানার ভেতর দেয়াল নির্মাণের চেষ্টা করে। হামলাকারীরা পুলিশের উপস্থিতির আগেই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, মন্দিরের জমি দখলের উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে এবং অধিকতর তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান জানান, পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যায় এবং বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে, সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম। তিনি স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন এবং গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, এটি জমি দখলের একটি পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসন কাজ শুরু করেছে।
জঙ্গল সলিমপুরে প্রায় ৩০০ হিন্দু পরিবারের বসবাস এবং এলাকাটিতে পাঁচটি মন্দির রয়েছে। আক্রান্ত মন্দিরটি সলিমপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর সমাজ এলাকায় অবস্থিত। স্থানীয়রা বলছেন, হামলার আগে এমন কোনো বিরোধ বা উত্তেজনার লক্ষণ ছিল না, যা এই হামলার পূর্বাভাস দিতে পারত।
মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে করা সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়েছে, রাত তিনটা থেকে চারটার মধ্যে মন্দিরের টিনশেড ঘরটি ভেঙে ফেলা হয় এবং পাশে ফেলে দেওয়া হয়। একইসাথে বাঁশের খুঁটি ও বেড়ায় আগুন লাগানো হয়। ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, এলাকার কারো সাথে তাদের বিরোধ নেই এবং ধারণা করা হচ্ছে, কিছু লোক মন্দিরের জায়গা দখলের চেষ্টা করছে।
ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি, তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ ও জড়িতদের পরিচয় স্পষ্ট হওয়ার জন্য তদন্ত চলছে।
ঘটনার গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতা বিবেচনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নজরদারি এবং সুষ্ঠু তদন্ত প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী।
তারিখ: ০৩ জুন, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: prothomalo, bdnews24
Click here to read this article in English