বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ১২ বছর বয়সী এক ম্রো কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি মেনইয়া ম্রো (৪০), পেশায় কৃষিজীবী। তিনি একই এলাকার বাকীছড়া বটতলী গোদার পাড়ার বাসিন্দা এবং স্থানীয়ভাবে আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন পাড়ার কয়েকজন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক রয়েছে।
শিশুটির মা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় মেনইয়া ম্রো তার মেয়ে ও আরেক কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় ঝিরিতে কাঁকড়া ধরতে নিয়ে যান। কাঁকড়া ধরার কাজ করতে করতে রাত গভীর হয়ে গেলে তিনি শিশুদের জানান যে এত রাতে বাড়ি ফেরা সম্ভব হবে না এবং কাছাকাছি একটি জুমঘরে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেন।
পাহাড়ি এলাকায় চাষের কাজে ব্যবহৃত এই জুমঘরে রাতের বেলায় অবস্থান করার সময় গভীর রাতে মেনইয়া ম্রো ১২ বছর বয়সী শিশুটিকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন শিশুটির মা।
রাতের একপর্যায়ে শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় চিৎকার করে একা বাড়িতে ফিরে আসে। তার মায়ের ভাষ্য, “মেয়ে বাড়িতে ফিরে রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে। জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, মেনইয়া ম্রো তাকে ধর্ষণ করেছে।
রোববার সকাল ৮টার দিকে গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. দিলীপ চৌধুরী জানান, “শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সহযোগিতায় রক্ত সংগ্রহ করে অপারেশন শুরু করা হয়।”
অপারেশনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “শিশুটির পায়ুপথ ও জরায়ুর ভেতরে ও বাইরে ৯০ শতাংশ কাটাছেঁড়া পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে যা ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের ক্ষত অন্য কোনো সাধারণ কারণে হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।”
ম্রো স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তনয়া ম্রো জানিয়েছেন, “ওই এলাকায় কিছু ম্রো পরিবার বসবাস করে, যারা অত্যন্ত দরিদ্র। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এর আগেও খারাপ আচরণের অভিযোগ শোনা গেছে।”
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাসুদ পারভেজ বলেন, “গতরাতে মাছ ধরার সময় শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে শিশুটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইতোমধ্যে আমরা একজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছি এবং ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।”
বান্দরবান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু নাছের জানান, “কিশোরী ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং চিকিৎসকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।”
তারিখ: ০৯ জুন, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: ittefaq, dailyjanakantha, prothomalo, bdnews24
Click here to read this article in English