পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চারাবুনিয়া গ্রামে গত ১৩ জুন শুক্রবার দুপুরে ঘটে একটি চাঞ্চল্যকর পারিবারিক হত্যাকাণ্ড। হত্যার অভিযোগে ওই পরিবারেরই এক সদস্য, মো. আল-আমিন (২৭), বর্তমানে গ্রেপ্তার ও পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য ও পুলিশের আনুষ্ঠানিক বিবরণ অনুযায়ী, ১০৫ বছর বয়সী কুলসুম বিবি এবং ৪৮ বছর বয়সী সহিদা বেগম—যিনি অভিযুক্ত যুবকের সৎ মা—তাদের নিজ বাড়িতেই দা দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়।
ঘটনার বিবরণ
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের তথ্যে জানা গেছে, ঘটনার দিন দুপুরে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়ির বাইরে ছিলেন। আল-আমিনের বড় ভাই ইউপি সদস্যের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে যান এবং তার বাবা রাজ্জাক খান কাজের জন্য বাইরে ছিলেন। এ সময় বাড়িতে একা ছিলেন সহিদা বেগম ও শতবর্ষী কুলসুম বিবি। এ সুযোগেই আল-আমিন তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে বাড়ির আঙিনায় ফেলে রাখে এবং এরপরই পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, আল-আমিন দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তার অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে কয়েকদিন আগে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। ঘটনাটির দিন রাতেই তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বাসের টিকিট সংগ্রহ করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তার ও আইনি প্রক্রিয়া
পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত আল-আমিন পলাতক হয়। তাকে ধরতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। অবশেষে ১৭ জুন সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা সদরঘাট এলাকার ‘প্রিন্স অব কামাল’ লঞ্চের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে পটুয়াখালী আনা হচ্ছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আদালতে তোলা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
প্রাথমিক তদন্ত ও মেডিকেল রিপোর্ট
ঘটনার পর নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, উভয়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ এবং সিআইডি যৌথভাবে ঘটনাটি তদন্ত করছে।
পারিবারিক প্রেক্ষাপট ও মানসিক অবস্থা
নিহত কুলসুম বিবি ছিলেন আল-আমিনের দাদি এবং সহিদা বেগম তার সৎ মা। পরিবারের বরাত দিয়ে জানা গেছে, আল-আমিন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতেন। সেখান থেকে বাড়িতে ফেরার পর থেকেই তার মাঝে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘটনার কয়েক দিন আগেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন এবং তিন-চার দিন আগে তাকে খুঁজে এনে পুনরায় বাড়িতে রাখা হয়।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযুক্ত আল-আমিন মাঝে মাঝেই অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। তবে কেউই কল্পনা করতে পারেননি যে এই ধরনের একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তাদের দাবি, সমাজে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য কার্যকর চিকিৎসা ও নজরদারির ব্যবস্থা থাকা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। তবে মানসিক ভারসাম্যহীনতার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
মামলা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
ঘটনার পরদিন, ইসমাইল মোল্লা নামের এক ব্যক্তি সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় মো. আল-আমিনকেই একমাত্র আসামি করা হয়। বর্তমানে পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রশাসনের মন্তব্য
পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং তদন্তে সহায়তা করছে সিআইডি। তিনি জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, পারিবারিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক অস্থিতিশীলতা হত্যাকাণ্ডের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
তারিখ: ১৮ জুন, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: prothomalo, jugantor, kalerkantho, banglanews24, ittefaq, bd-pratidin, dailyjanakantha, somoynews
Click here to read this article in English