হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় চলন্ত বাসে কলেজে অধ্যয়নরত এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাসচালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে এই ভয়াবহ অভিযোগ ওঠার পর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে অভিযুক্তদের একজনকে ঘটনাস্থলেই এবং অপরজনকে পরদিন গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
রোববার (১৫ জুন) রাতে ঢাকার এক কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী নবীগঞ্জ উপজেলার বানিয়াচং গ্রামে দাদার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে যাত্রা শুরু করেন। ঢাকা থেকে তিনি প্রথমে ‘বিলাস পরিবহন’-এ করে সিলেট আসেন। এরপর শেরপুর থেকে ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি স্থানীয় বাসে করে নবীগঞ্জের পথে রওনা দেন।
বাসটি শেরপুর এলাকায় পৌঁছানোর পর অধিকাংশ যাত্রী নেমে গেলে বাসচালক সাব্বির মিয়া (২৫) ও তার সহকারী লিটন মিয়া (২৬) ওই তরুণীকে চলন্ত বাসেই পালাক্রমে ধর্ষণ করেন বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়। আউশকান্দি এলাকায় পৌঁছালে মেয়েটির চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশকে খবর দেন। রাত ১২টার দিকে চালক সাব্বির মিয়াকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান হেলপার লিটন মিয়া।
গ্রেপ্তার ও মামলার অগ্রগতি
পরদিন (সোমবার) সকালে ভুক্তভোগী নিজেই নবীগঞ্জ থানায় বাদী হয়ে বাসচালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নির্যাতিতার সঙ্গে হাসপাতালে সাক্ষাৎ করেন।
সোমবার রাতে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৯ এর সিলেট সদর কোম্পানি ও শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্প যৌথ অভিযান পরিচালনা করে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জালালপুর এলাকা থেকে হেলপার লিটন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন মঙ্গলবার সকালে তাকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
চালক সাব্বির মিয়ার বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতাবাদ বাংলাবাজার এলাকায় এবং হেলপার লিটন মিয়া সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রশিদপুর গ্রামের বাসিন্দা।
চিকিৎসা ও তদন্ত
ধর্ষণের শিকার তরুণী বর্তমানে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ তার শারীরিক পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
প্রশাসনের বক্তব্য
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। ভুক্তভোগীর পাশে থেকে তাকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
তারিখ: ১৭ জুন, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: bdnews24, prothomalo, bd-pratidin, ajkerpatrika, dhakamail
Click here to read this article in English