কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফজর আলী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাজুড়ে এবং অনলাইনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরদিন শুক্রবার (২৭ জুন) ভুক্তভোগী নারী নিজেই বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযুক্ত ফজর আলী (৩৮) একই গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফজর আলী গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন এবং নিজেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের দলীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি প্রায় ১৫ দিন আগে হোমনা উপজেলার স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে তার বাবা-মা বাড়ির বাইরে গেলে, অভিযুক্ত ফজর আলী তার বাড়িতে গিয়ে দরজা খুলতে বলেন। নারী দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে, ফজর আলী একপর্যায়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং তাকে ধর্ষণ করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশীরা জানান, ধর্ষণের সময় ভুক্তভোগীর চিৎকার শুনে স্থানীয়রা সেখানে ছুটে যান। ভুক্তভোগীর চাচি শ্বরসতী বর্মন বলেন, “আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পূজা চলছিল পাশের বাড়িতে। আমি সেখানে যেতে ঘর থেকে বের হই, তখন পাশের বাড়ি থেকে শব্দ শুনে ভয় পেয়ে পূজার অনুষ্ঠান থেকে লোক ডেকে আনি। পরে দরজা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পাই এবং সকলে মিলে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করি।”
স্থানীয় বাসিন্দা সজীবও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে চাচি এসে জানান তার পাশে কিছু হচ্ছে। আমরা সেখানে গিয়ে দরজা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পাই এবং ভেতরে গিয়ে দেখি ফজর আলী ধর্ষণ করছে। আমরা তাকে ধরে মারধর করি এবং অনেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করে ফেলে।”
এলাকার আরও কয়েকজন বাসিন্দা জানান, অভিযুক্ত ফজর আলী নিজেকে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় দাবি করলেও এলাকায় তার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগীর চাচা নকুল বর্মন বলেন, “ঘরের দরজা ভেঙে আমার ভাতিজিকে ধর্ষণ করেছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আজ ভাতিজিকে ধর্ষণ করা হলো, কাল আমাদের পরিবারকেও টার্গেট করা হতে পারে। আমরা বিচার চাই, নিরাপত্তা চাই।”
ভুক্তভোগী নারী জানিয়েছেন, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন এবং তিনি দুই সন্তানের জননী। তিনি আরও বলেন, “ফজর আলীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় ছিল পারিবারিকভাবে, মূলত টাকা ধার নেওয়ার সূত্রে। সেই সম্পর্ক কাজে লাগিয়েই সে বাড়িতে প্রবেশ করেছে।”
মামলার তদন্ত ও আইনগত অগ্রগতি সম্পর্কে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান জানান, “ভুক্তভোগী নারী নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান চলছে। তার অবস্থান শনাক্তে পুলিশের দুটি টিম কাজ করছে। ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “এই ঘটনায় যেসব ব্যক্তি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন ঘটনা রেকর্ড এবং প্রচার করা অপরাধ এবং তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত ফজর আলী পলাতক রয়েছেন।
তারিখ: ২৮ জুন, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: bdnews24, kalerkantho, manobkantha
Click here to read this article in English