পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় এক মর্মান্তিক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে । শুক্রবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে দুই বছর বয়সী একটি শিশুর গলায় ছুরি ধরে তার মাকে (২৮) দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেছেন, ঘটনার পর তাকে বিচার চাইতে বাধা দেওয়ার জন্য আপোষে রাজি করাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
ঘটনার বিবরণ
ভুক্তভোগী নারী পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জুটমিল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। শুক্রবার রাতে তিনি অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে ইজিবাইকে করে সদর উপজেলার বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে তিন মাইল সুরিভিটা এলাকায় পৌঁছালে পেছনের একটি ইজিবাইক থেকে পরিচিত এক যুবক (জনি ইসলাম) তাকে ডাকেন। ইজিবাইক থামতেই জনিসহ ছয় জন তাকে জোর করে রাস্তার পাশের একটি চা বাগানে নিয়ে যান। সেখানে তারা শিশুটির গলায় ছুরি ধরে মাকে ধর্ষণ করে।
ভুক্তভোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, “আমি চিৎকার করলে তারা আমার শিশুর গলায় ছুরি ধরেছিল। আমি সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। একে একে ছয় জন আমাকে ধর্ষণ করে। তাদের মধ্যে চারজন আমার পরিচিত, বাকি দু’জন অপরিচিত ছিল।” ধর্ষণের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান। পরে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে আসামিরা পালিয়ে যায়।
পুলিশের তৎপরতা ও গ্রেপ্তার
স্থানীয়রা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে খবর দিলে রাত ১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগী ও শিশুকে উদ্ধার করে। তাদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে ভুক্তভোগী নারী পঞ্চগড় সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এজাহারে চারজন পরিচিত আসামির নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাত আরও দুইজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
পুলিশের অভিযানে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: জনি ইসলাম (২৭), জগদল বাজার। বিপ্লব হোসেন (২৫), জগদল বাজার। মকছেদুল ইসলাম (৩৩), জগদল বাজার। সাদেকুল ইসলাম (২৮), বদিনাজোত
পুলিশ জানিয়েছে, অবশিষ্ট আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
চিকিৎসা ও আইনি প্রক্রিয়া
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আবুল কাশেম জানান, ভুক্তভোগী নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, তবে ধর্ষণের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য মেডিকেল পরীক্ষা চলছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, “ভুক্তভোগীর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের দাবি
এ ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ভুক্তভোগীর পরিবার ন্যায়বিচার চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। তার বড় ভাই বলেন, “আমার বোনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। আমরা শুধু বিচার চাই, যেন এমন অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”
তারিখ: ০৫ জুলাই, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: dailyjanakantha, dhakapost, ajkerpatrika, sarabangla
Click here to read this article in English