সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া পোস্ট অফিসে ১০ টাকার প্রলোভনে আট বছরের মানসিক প্রতিবন্ধী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত পোস্টমাস্টার শেখ শহিদুল ইসলাম (৫৫)–কে স্থানীয় জনতা আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে। রবিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশুটি তার মায়ের প্রথম স্বামীর সন্তান। বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদের পর তার মা পাশের বাঁশঘাটা গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাবুলিয়া গ্রামে মেয়েটির পিতার বাড়ি হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই সে পোস্ট অফিসের সামনে দিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া-আসা করত। রবিবার সকালে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় পোস্টমাস্টার শহিদুল ইসলাম অফিসের কাগজপত্র গুছিয়ে দিলে ১০ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ঘরের ভেতর ডেকে নেন। এরপর ঘরের দরজা বন্ধ করে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।
ঘটনাটি স্থানীয় জনতার নজরে আসলে তারা ঘরের দরজা খুলে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। অভিযুক্ত পোস্টমাস্টারকে আটক করে পুলিশ ও র্যাবকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে র্যাব সদস্যরা ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং শহিদুল ইসলামকে আটক করে হেফাজতে নেন।
পোস্ট অফিসের পিয়ন আশরাফ আলী বলেন, দুপুরের খাবার শেষে অফিসে এসে দেখেন উত্তেজিত জনতা পোস্টমাস্টারকে আটক করেছে। পরে পুলিশ ও র্যাব এসে তাকে নিয়ে যায়। স্থানীয় গ্রামপুলিশ সদস্য শহিদুল ইসলামও একই তথ্য জানান এবং বলেন, ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা অভিযোগ করেন, মেয়েটি তার বাবার বিচ্ছেদের পর মাঝে মাঝে খালার বাড়ি ও আত্মীয়দের বাড়িতে থাকে। কখনো খাবারের অভাব হয়, আবার কখনো খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। রবিবার সকাল ১০টার দিকে মেয়েটি বাবুলিয়া পোস্ট অফিসের সামনে গেলে পোস্টমাস্টার কাগজপত্র ফেলে দেওয়ার কথা বলে ১০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে ঘর ঝাড় দিতে বলার সময় মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন বলে তার দাবি।
তবে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসবেন বলে মেয়েটিকে ১০ টাকা দিয়ে জমে থাকা ময়লা ও কাগজপত্র পরিষ্কার করতে বলেছিলেন, কিন্তু তার গায়ে হাত দেননি। তিনি বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পোস্ট অফিসে আটক শহিদুল ইসলামকে ঘর থেকে বের করা মাত্র পুলিশের উপস্থিতিতে একদল লোক মারধর শুরু করে। পুলিশ তখন তার মাথায় হেলমেট পরিয়ে দ্রুত থানায় নিয়ে যায়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ডালিয়া আক্তার জানান, রবিবার দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে কোনো আট বছরের ধর্ষণ–সংক্রান্ত ভুক্তভোগী ভর্তি হয়নি বা প্রাথমিক চিকিৎসা নেননি।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয় জনতা রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পোস্টমাস্টার শহিদুল ইসলামকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। দুপুর ১টার দিকে ভুক্তভোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত ২০০৩)–এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার আসামিকে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, লিখিত অভিযোগ ও তদন্ত–সংশ্লিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তারিখ: ০৩ আগস্ট, ২০২৫
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন: itvbd, jugantor, dhakamail, somoynews
Click here to read this article in English